ঈদ যাত্রায় সাভারে লক্কড় ঝক্কড় গাড়ি মেরামতের তোড়জোড়
প্রতি বছর ঈদে রাজধানী ঢাকা ছেড়ে প্রিয়জনের কাছে ছুটে যান লাখো মানুষ। সড়ক, রেল ও নৌপথ সব জায়গায় থাকে ঈদে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এই সুযোগে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কিছু অসাধু পরিবহন ব্যবসায়ী বাড়তি লাভের আশায় সড়কে নামান ফিটনেসবিহীন গাড়ি। ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রার সারথি এই সব ফিটনেসবিহীন গাড়ি গুলোকে রংচংয়ে সাজিয়ে তোলার তোড়জোড় চলে ঈদ মৌসুমেই। তাইতো বিভিন্ন ওয়ার্কসপ গুলোতে দিন রাত লক্কড় ঝক্কড় পরিবহন গুলোর কাঠামো ঝালাই দিয়ে মেরামত ও রং করতে ব্যস্ত দেখা যায় ওয়ার্কশপ কারীগরদের।
ঈদ উপলক্ষে সাভারের আমিন বাজার, বলিয়ারপুর হেমায়েতপুর, বিশমাইল ও আশুলিয়ার নিরিবিলি, নয়ার হাট, বাইপাইল, জিরানীসহ বিভিন্ন এলাকার ওয়ার্কশপ কারীগরদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। কারিগরদের কেউ গাড়ির ভাঙা বিভিন্ন অংশ ঝালাই করছেন, কেউ রং মাখাচ্ছেন, আবার কেউ বসার সিট বদলাচ্ছেন, কেউবা আবার সিটের পুরাতন কাপড় পাল্টাচ্ছেন, কেউ জানালার ভাঙা গ্লাস পরিবর্তন করছেন।
নিরিবিলি এলাকার রতন মিয়ার কারখানার কারিগররা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা প্রায় ৫ দিন ধরে এই গাড়িতে ৬ জন দিন রাত কাজ করেছি। আরও একদিন কাজ করলে কাজ শেষ হবে। গাড়ির ভাঙা বডি ঝালাই করার পর রং করে চাকচিক্য করা হয়েছে। এখন শুধু ফিনিশিং ও রং করা বাকি আছে।’
হেমায়েতপুর এলাকার রাব্বি মটরস এর কারিগররা বলেন, ‘ঈদের আগে কাজের অনেক চাপ, কথা বলার সময় নেই। আমাদের আরও ৪টি গাড়ির পুরো বডির মেরামত করে নতুন করতে হবে। বছরের দুই ঈদে কাজ করে আমরা অতিরিক্ত আয় করার সুযোগ পাই।’
চাঁনমিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপেরে কারিগররা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এখানে আমরা শুধু পরিবহনের বডিতে কোন সমস্যা থাকলে তা মেরামতের কাজ করি। বডির ট্যাপ খাওয়া অংশ সাড়িয়ে রং করে নতুনের মত করার চেষ্টা করি। তবে এসব পরিবহনের ইঞ্জিন পুরনোই রয়ে যায়। যার বেশির ভাগই থাকে অচল।’
সানি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক সেকেন্দার আলী বলেন, ‘এমনিতেই সব সময় তার ওয়ার্কশপে কাজের চাপ থাকে। তবে ঈদ মৌসুম এলে এই চাপ আরও বেড়ে যায়। তাই এসময় অতিরিক্ত কারিগর রাখা হয়। মোট ৮টি গাড়ির বডি মেরামত ও রং করে আগামী সপ্তাহের মধ্যে মালিকের কাছে তাদের ডেলিভারি দিতে হবে বলেও জানান তিনি।’
পরিবহন ব্যবসায়ী শরিফুল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা ছোট ব্যবসায়ী। কম দামে দুই একটা গাড়ি কিনে ব্যবসা করি। বছরে দুই বার এই সুযোগ পাই। শুধু ঈদেই আমরা রিজার্ভ ভাড়া পাই। সারাবছর আমাদের টানা-টানি করে চালাতে হয়। সেজন্য গাড়ি মেরামত ও রং করে যাত্রীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করি।’
অপর পরিবহন ব্যবসায়ী আলাল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমার তিনটি গাড়ির মধ্যে গত বছর দুটি ভাড়া হয়েছিল। আর একটি রং করিনি সে জন্য অল্প টাকাতেও কেউভাড়া নেয়নি। এবার তিনটাই পরিপাটি করার জন্য ওয়ার্কশপে দিয়েছি। আশা করি তিনটাই ভাড়া হবে।’
এ ব্যাপারে সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ তাহমিদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ঈদে রাস্তায় গাড়ির চাপের মধ্যে ফিটনেস ও লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি যাতে রাস্তায় না নামে সেজন্য ট্রাফিক পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের গাড়ি যদি আমাদের হাতে ধরা পড়ে তাহলে সাথে সাথে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ট্রাফিক পুলিশকে বলা হয়েছে।’