প্রাণ ফিরেছে ঈশ্বরদীর বেনারসি পল্লীর
ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাবনার ঈশ্বরদীর তাঁত শ্রমিকরা। এখানকার বেনারসি তাঁতপল্লীতে শাড়ি তৈরির ধুম পড়েছে। বছরের বেশ কয়েক মাস কারিগররা অলস সময় কাটলেও এখন দম ফেলার সময় পাচ্ছেন না তারা। শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করছেন স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও।
সরেজমিনে জানা যায়, জেলার সবচেয়ে ভালো ও উন্নতমানের জামদানি,কাতান আর বেনারসি তৈরিতে বিখ্যাত ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লী। ঈদকে সামনে নিয়ে দিনরাত সমানতালে কাপড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগরেরা। দীর্ঘদিনের মন্দা ভাব থাকলেও ঈদে প্রাণ ফিরে এসেছে এই বেনারসি পল্লীতে।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এই বেনারসি পল্লীতে আসছেন পছন্দের ডিজাইন ও নকশা করা শাড়ি কিনতে। শুধু দেশেই নয়, পার্শ্ববর্তী ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে এখানকার শাড়ি।
ব্যবসায়ীরা জানায়, কলকাতাসহ অন্যান্য দেশে ঈশ্বরদীর বেনারসি শাড়ির ব্যাপক চাহিদা থাকায় অনেক অর্ডার মিলছে। এবার ঈদে বিভিন্ন ধরনের কাতান শাড়ি গুরুত্ব পাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের শাড়ির অর্ডার থাকায় সেগুলো তৈরিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কারিগরদের।
এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাঁত শ্রমিকরা জানান, বাহারি রং, ডিজাইন আর নকশার কাপড় বুনন করা হলেও এই পল্লীতে নিজস্ব ক্যালেন্ডার মেশিন নেই। ঢাকা থেকে ক্যালেন্ডার পালিশ করতে গিয়ে অনেক সময় অপচয় হয় তাদের। শুধু সময় নয়, গুণতে হয় বাড়তি টাকা।
কথা হয় ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর জাবেদ হোসেন ওরফে জাবেদ বেনারসির সঙ্গে। তিনি বলেন, শ্রমিক সংকটে আছি। ঈশ্বরদীতে অনেক বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ ও উৎপাদনে যাওয়ায় এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা পেশা পরিবর্তন করেছেন। ঈদকে সামনে নিয়েই বেশ কিছু শ্রমিক বর্তমান পেশা ছেড়ে তাঁতশিল্পে যুক্ত হয়েছেন।
তিনি বলেন, কাতান, বেনারশি, জামদানির কদর বেশ রয়েছে বাজারে। এবারের ঈদে আশা করছি ক্রেতাদের চাহিদানুযায়ী শাড়ি সরবরাহ করতে পারব।
বেনারসি কারিগর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একটি শাড়ির দাম পড়ে সর্বনিম্ন ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। দিনের পুরোটা নতুবা রাতের পুরোটা কাজ করলে তিনদিনেই শাড়ি তৈরি করা যায়। তিনদিনেই শাড়ি তৈরির পারিশ্রমিক পাওয়া যায় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। আর ওই শাড়িই বাজারে বিক্রয় হয় সর্বনিম্ন ১২ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায়।
কারিগর সোহেলের দাবি, এই পেশা ছাড়া আর কোনো কাজ তার জানা নেই। দৈনিক ১২-১৫ ঘণ্টা কাজ করলে সপ্তাহে অন্তত ২ টি শাড়ি তৈরি সম্ভব। বছরে দুটি ঈদ ও পূজার সময় শাড়ির চাহিদা বাড়ে। এসময় কাজ করে বেশি আয় করা সম্ভব হয়।
কারখানা মালিকরা বলেন, দিন বদলেছে। আগে পাকিস্তান ভারত থেকে চোরা পথে কাতান-বেনারসি আমাদের দেশে আসতো। অথচ এখন উল্টো তারাই আমাদের দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে তাদের দেশে। তাদের দাবি, আমাদের ঈশ্বরদীর উৎপাদিত শাড়িগুলোর গুণগতমান, সৌন্দর্য, রং, নকশা বা ডিজাইন অন্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো। তাই চাহিদাও বেড়েছে। উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ঈশ্বরদীর তৈরি শাড়ি দেশের ব্যাপক চাহিদা মেটাতে পারবে।
আবু বকর সিদ্দিক নামে এক তাঁত মালিক জানান, বিন্দিয়া কাতান, পিওর বেনারসি শাড়িতে বিশেষ কারুকাজ, আনারকলি ও ফুলকলি ছাড়াও নেট কাতান, পিওর কাতান, বেনারসি জুট জামদানি, কুচি জামদানি, মাসরাইস কাতান, ওপেরা কাতান, লেহেঙ্গা শাড়ি ও বিভিন্ন মানের থ্রি-পিস তৈরি করছে ওই তাঁতগুলো।
উল্লেখ্য, ৯০ টি প্লট দিয়ে ২০০৪ সালের ১২ ডিসেম্বর ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে ৮ টি কারখানা চালু আছে। তবে অভিজ্ঞ শ্রমিকের অভাবে পল্লীর বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। যারা রয়েছে এখন তারাও দৈনিক ২০ থেকে ২৫টি উন্নত মানের শাড়ি তৈরি করেন। শাড়ি তৈরির পর ঢাকার মিরপুর ও নারায়ণগঞ্জ এ পালিশ করার জন্য পাঠানো হয় এতেই কারখানা মালিকরা হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এমন দাবি কারিগর, কারখানার মালিক ও ব্যবসায়ীদের।