ঈদের জামা কিনতে ইলিশ ধরার চেষ্টায় শিশুরা
সারাদেশে ঈদের জামা-কাপড় কেনায় ব্যস্ত সময় পার করছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। কিন্তু মেঘনা নদীর পাড়ের জেলেরা নতুন জামা কাপড় কেনার কথা চিন্তাও করতে পারছেন না। এ ভাবনা তাদের জন্য দুঃস্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। কারণ নদীতে কাঙিক্ষত ইলিশ না পাওয়ায় তাদের উপার্জনও নেই।
এদিকে বাবা-মা নতুন জামা কিনে দিতে না পারায় জাল হাতে বের হয়ে পড়েছে জেলে পল্লীর শিশুরাও। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে ইলিশ ধরে হাটে বিক্রি করবে। পরে সেই টাকা দিয়ে ঈদের জন্য নতুন জামা কিনবে।
প্রায় ২০ ফুটের একটি জাল নিয়ে নদীর তীরে দেখা যায় জেলে পল্লীর শিশু মাহবুব (১১), সুমন (৮) ও সালাউদ্দিনকে (৮)। জানতে চাইলে তারা বার্তা২৪.কম-কে তাদের মনের অভিব্যক্তিটি জানায়। লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মেঘনার তীরের চরকালকিনি গ্রামে তাদের বাড়ি।
সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর পাড়ে জালে রশি লাগিয়ে ইলিশ শিকারের প্রস্তুতি নিচ্ছে শিশুরা। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা জাল নিয়ে নেমে পড়ে নদীতে। ইলিশ ধরার জন্য নদীতে পেতে দেয় ঐ জাল। এ সময় তপ্ত রোধে নদীর ঠাণ্ডা পানিতে দুষ্টুমি আর আনন্দে মেতে উঠে তারা।
অন্যদিকে নদীর কিনারায় ইলিশ খুব কমই আসে। ইলিশ পাবে কিনা তা নিয়েও তারা দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে। তবে তাদের আশা, তাদের জালে ধরা পড়বে ইলিশ। আর সেই ইলিশ বিক্রি করে তারা নতুন জামা কিনবে।
জানা গেছে, মেঘনায় মাছ শিকার করে লক্ষ্মীপুরের প্রায় ৬২ হাজার জেলের সংসার চলে। কিন্তু গত এক মাস নদীতে ইলিশ না পাওয়ায় উপার্জন নেই অধিকাংশ জেলের। এই কারণে ঈদ আসলেও নতুন জামা কিনে দিতে পারেননি ছেলেমেয়েদের। এখন বাধ্য হয়েই নদীর কিনারায় জাল ফেলে ইলিশ ধরার চেষ্টায় ব্যস্ত জেলে পল্লীর শিশুরা। নদীতে কাঙিক্ষত ইলিশ ধরা না পড়ায় ঘাটেও এর দাম বেশি। একেক কেজি ইলিশ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
জেলে শিশু মাহবুব বলে, ‘আব্বা এক মাস হয়ছে মাছ ধরে না। বাড়িতে মাছও আনে না। ধার-দেনা করে আমাদের সংসার চলে। নতুন জামা কিনে দিতে বললে আব্বা বলছে, টাকা নাই এখন দিতে পারবে না। নদীতে গেলে পরে কিনে দেবে। কিন্তু ঈদের দিন আমার নতুন জামা লাগবে। তাই নদীতে মাছ ধরতে এসেছি।’