হবিগঞ্জে পানিবন্দী ঈদের আনন্দ!

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, হবিগঞ্জ, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জলাবদ্ধতার জন্যে বিড়ম্বনায় এলাকাবাসী, ছবি: বার্তা২৪.কম

জলাবদ্ধতার জন্যে বিড়ম্বনায় এলাকাবাসী, ছবি: বার্তা২৪.কম

জলাবদ্ধতা যেন হবিগঞ্জ পৌরবাসীর নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পৌর শহরের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। পরিবেশবাদি ও নগর বিশ্লেষকদের দাবি টানা ৫ ঘন্টার বৃষ্টিতেই হবিগঞ্জ পৌরসভার এক এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় পৌরসভার অন্তত ৫০ হাজার জনসাধারণকে।

জানা যায়, ৯.০৫ বর্গ কিলোমিটার ১৮৮১ খ্রি. হবিগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠার হয়। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও এখনো সে পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা পাননি পৌরবাসী। জলাবদ্ধতা, যানজট আর ময়লা আবর্জনার সাথে যুদ্ধ করেই বসবাস করতে হচ্ছে হবিগঞ্জ পৌরসভার ৯৫ হাজার নাগরিকসহ প্রায় দেড় লাখ মানুষকে।

তবে পৌরবাসীর সব চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। ঘন্টাখানেক বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় পৌর শহরের অনেক স্থান। অনেকের বাসা-বাড়িতেও পানি উঠে যায়। বন্ধ হয়ে পড়ে নিম্ন ও মধ্য আয়ের অনেক পরিবারের রান্না-বান্না ও খাওয়া-দাওয়া।

এদিকে, আজ বুধবার (০৫ জুন) ঈদ। ফলে ঈদের মধ্যে জলাবদ্ধতায় থাকতে হবে হবিগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দাদের। কারণ সোমবার (৩ জুন) রাতভর ও মঙ্গলবার (০৪ জুন) দিনভর বৃষ্টির কারণে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন পৌরসভার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকার মানুষ। একইসঙ্গে বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় কাদা এবং পানি জমে তলিয়ে গেছে শহরের প্রধান সড়কসহ অধিকাংশ রাস্তা। ঈদের বর্ণীল আনন্দ যেন মলিন করতে চলেছে এই জলাবদ্ধতা।

শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও বাস ভবন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পুলিশ সুপারের বাসভবন, সার্কিট হাউজ, ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়, শায়েস্তানগর, ইনাতাবাদ, চৌধুরীবাজার, সার্কিট হাউজ রোড, নোয়াহাটি, পুলিশ সুপারের বাস ভবন, ডাকঘর এলাকা, বগলবাজার, উত্তর শ্যামলী, নোয়াবাদ, মোহনপুর, শ্যামলী, পুরাতন হাসপাতাল সড়ক, কালিগাছ তলা, দিগন্তপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু পরিমাণ পানি জমে গিয়েছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/05/1559675283351.jpg

বিজ্ঞাপন

একই সাথে ড্রেনের ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানিতে ভরে গেছে চারপাশ। ময়লা আবর্জনাযুক্ত পানির কারণে বাসা থেকে বের হতে পারছেন না কেউ। অনেক বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান অনেকে।

পৌরবাসীর অভিযোগ, পানিনিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বছরের পর বছর পৌরবাসী জলাবদ্ধতার সঙ্গে যুদ্ধ করে আসলেও সমস্যা সমাধানে উদাসীন পৌর কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে শহরের শায়েস্তানগর এলাকার বাসিন্দা মো. ইমরান আহমেদ বলেন, ‘শায়েস্তানগর এলাকা পানিতে ডুবতে ভারি বর্ষণেরও প্রয়োজন হয় না। সামান্য বৃষ্টিই যথেষ্ট এই এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার জন্য।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/05/1559675306727.jpg

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে অনেক ব্যবসায়ি আছেন। তাদেরকে বর্ষা মৌসুমে নিয়মিত জলাবদ্ধতার সাথে সংগ্রম করে চলতে হয়।’

ফায়ার সার্ভিস এলাকার বাসিন্দা মতিউর রহমান বলেন, ‘পৌর কর্তৃপক্ষ কি করছে বোঝার কোন উপায় নেই। বছরের পর বছর জলাবদ্ধতার মধ্যে বসবাস করলেও কর্তৃপক্ষের কোন মাথাব্যথাই নেই। শুধু দ্রুত সমস্যা সমাধান হবে বলে আশ্বাস প্রদান করে যাচ্ছে।’ 

পুরান বাজার (বগলা বাজার) এলাকার ব্যবসায়ি আশোতুষ বণিক বলেন, ‘বগলা বাজার শহরের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে। অথচ এখানের সবগুলো রাস্তা একদম ভাঙা এবং সবসময়ই এখানে জলাবদ্ধতা থাকে।’

তিনি জানান বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়িরা মেয়রের সাথে কয়েকবার আলোচনা করেও কোন ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়নি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/05/1559675329159.jpg

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র হবিগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘পৌরসভার ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন ধরে পরিস্কার করা হচ্ছে না। ফলে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় এভাবে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।’

তিনি বলেন, ‘মাত্র ৩-৪ ঘন্টা বৃষ্টি হলে হবিগঞ্জ পৌরসভার এ- তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। অথচ পৌর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।’

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র দিলীপ দাস জানান, হবিগঞ্জ পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পরিকল্পিত ভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে এ সমস্যার সমাধান করা হবে।

অভিযোগ করে তিনি বলেন- ‘পৌরসভার জলাবদ্ধতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে নাগরিকরাই দায়ি। কারণ তারা ড্রেনের মধ্যে ময়লা ফেলে। অথচ নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেললে এ সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করতো না।’