সাতছড়ি উদ্যানে দর্শনার্থীর ঢল, নানা অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ!
ঈদ মানে খুশি। আর সেই খুশিকে দ্বিগুণ করে নিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই ছুটে যান দর্শনীয় স্থানগুলোতে। ঈদের ছুটিতে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে হবিগঞ্জের ‘সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান’ এ ঢল নামে ভ্রমণপ্রেমী মানুষের। ঈদের দিন বৃষ্টির মাঝেও দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল। এদিন টিকিট বিক্রি হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকার। এবারের ঈদের ছুটিতে ৫ লাখ রাজস্ব আয় হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে উদ্যানের ভেতরের নানা অব্যবস্থাপনা আর ট্রি এডভ্যাঞ্চার পরিত্যক্ত থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দর্শনার্থীরা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছে, ঈদের আগে টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় উদ্যানের পরিবেশ কিছুটা খারাপ হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে ট্রি এডভ্যাঞ্চার মেরামত করা সম্ভব হয়নি।
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার অবস্থিত রঘুনন্দর পাহাড়ের সাতটি ছড়া থেকে মূলত নামকরণ করা হয়েছে ‘সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান।’ সুবজ প্রকৃতি আর বন্য প্রাণীদের দেখতে দর্শনার্থীরা এখানে ছুটে আসেন।
ঈদের দ্বিতীয় দিনে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিক্সা ও মোটরসাইকেলযোগে পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বেড়াতে এসেছেন।
বিশেষ করে নারী ও শিশুদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষ্য করার মতো। দর্শনার্থীদের পদচারণা আর নানা রকম পাখ-পাখালির শব্দে মুথরিত হয়ে উঠেছে উদ্যানের চারপাশ। চলছে দর্শনার্থীদের মাঝে ছবি ও সেলফি উঠানোর হিড়িক। শুধু উদ্যানের ভেতরে নয়, পাশের সবুজ চা বাগানগুলোও অনেক দর্শনার্থী ঘুরে ঘুরে দেখছেন। স্মৃতিটা ধরে রাখতে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে বন্দি হচ্ছেন ক্যামেরার লেন্সে।
এদিকে, ঈদে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের জন্য খোলে দেওয়া হয়েছে উদ্যানের পুরাতন গেট (বর্তমানে যেটি পরিত্যক্ত)। অন্য সময় একটিমাত্র গেটে বিক্রির করা হলেও ঈদ উপলক্ষে উদ্যানের তিনটি গেটেই টিকিট বিক্রি করছে কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে, পর্যটকদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে নির্মিত ট্রি এডভ্যাঞ্চারটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ অজুহাতে বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তরুণ দর্শনার্থীরা।
মাধবপুর থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী মো. ফয়জ মিয়া বলেন, ‘ঈদে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসার জন্য কাছের মনোরম পর্যটন স্পট সাতছড়ি উদ্যান। সুযোগ পেলেই এখানে আসি। কিন্তু এখানের প্রাকৃতিক দৃশ্য অপরূপ হলেও পরিবেশ অনেক খারাপ।’
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এছাড়া এখানে পর্যটকদের খাওয়া-দাওয়ার কোনো সুব্যবস্থা নেই। নেই নিরাপদ পানির ব্যবস্থা।
বানিয়াচং উপজেলা থেকে ঘুরতে আসা তরুণ রুবেল দাস বলেন, ‘এখানে নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। এছাড়া আমরা যারা তরুণরা রয়েছি তাদের সব চেয়ে বেশি পছন্দ ট্রি এডভ্যাঞ্চার। যেটিতে চড়ব বলে এসেছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা ঝুঁকিপূর্ণ দাবি করে পরিত্যক্ত করে রেখেছে। কর্তৃপক্ষের উচিত ছিলো- ঈদের আগে তা মেরামত করা এবং পর্যটকদের নিরাত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা।’
মাধবপুর উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হাসান আকাশ পরিবার-পরিজন নিয়ে সাতছড়ি উদ্যানে ঘুরতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এখানে পর্যটকদের কোনো নিরাপত্তা নেই। নেই খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা। বিষয়টি দুঃখজনক।’
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘পর্যটকদের সব ধরণের সুয়োগ-সুবিধার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। দর্শনার্থীদের নিরাপদ পানির জন্য একটি গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে।’
ট্রি এডভ্যাঞ্চার পরিত্যক্ত রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এটি মেরামত না করায় বর্তমানে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ঈদের আগে টানা কয়েকদিন বৃষ্টি থাকায় এটি মেরামত করা সম্ভব হয়নি।’