প্লেগ রোগে মরল ৩২০০ হাঁস, খামারির সর্বনাশ
মরা হাঁসের স্তূপ সামনে নিয়ে বসে আছে এক যুবক। সেখানে ভনভন করছে মশা-মাছি। আশেপাশে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ। উৎসুক লোকজন নাক চেপে পাশ কেটে যাচ্ছেন।
আহাজারি করে একটু পর পর এই যুবক বলে উঠছেন, ‘প্লেগ রোগে আমার সব হাঁস কাইর্যা নিল, আমার সর্বনাশ কইর্যা দিয়া গেল।’ সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য দু-একজন তার কাছে গেলেও দুর্গন্ধে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারছিল না।
রোববার (৯ জুন) সন্ধ্যায় এমন দৃশ্য দেখা যায় ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সহনাটি ইউনিয়নের ধূপাজাঙ্গালিয়া গ্রামের একটি হাঁসের খামারে। আহাজারি করা যুবকের নাম শাহীন মিয়া। তিনি ওই ইউনিয়নের পাতরাইল গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাড়ির পাশে ধূপাজাঙ্গালিয়া গ্রামে হাঁসের খামার করার জন্য বেসরকারি এনজিও সংস্থা ব্র্যাক ও একটি বাড়ি একটি খামার থেকে ৩৮হাজার টাকা ঋণ নেন শাহীন। কিন্তু টাকার ঘাটতি হওয়ায় তার বাবা আব্দুস সালাম নিজ নামে বেসরকারি এনজিও ব্র্যাক, আশা ও কৃষি ব্যাংক থেকে আরও ১ লাখ টাকা ঋণ তুলে ছেলের খামারে বিনিয়োগ করেন।
চলতি বছরের মে মাসে নান্দাইল থেকে ১ লাখ ১২ হাজার টাকা দিয়ে সাড়ে ৩ হাজার হাঁসের বাচ্চা ক্রয় করেন শাহীন। এরপর তিনমাস লালন পালন করে হাঁস প্রাপ্তবয়স্ক করতে ওষুধ ও খাবার বাবদ ২ লাখ টাকা খরচ হয়। ঈদের পর হাঁসগুলো ৫ লাখ টাকায় বিক্রির কথা ছিল। কিন্তু ঈদের দিন থেকেই খামারে মড়ক দেখা দেওয়ায় সোমবার পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার ২০০ হাঁস মারা যায়। মরে যাওয়া হাঁসগুলো একে একে মাটিতে পুতে ফেলা হচ্ছে।
শাহীন মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘খামারে মড়ক লাগনের পর সুদে চল্লিশ হাজার টেকা ঋণ কইর্যা চিকিৎসার পরও হাঁস বাচাঁইতে পারি নাই। পরে চট্টগ্রামের এক ডাক্তাররে সব খুইল্যা কইলে তিনি কইলেন ডাক প্লেগ রোগ হইছে। শনিবার (৮ জুন) গৌরীপুর পশু হাসপাতালে গিয়া প্লেগ রোগের ভ্যাকসিন পাই নাই। চোখের সামনে হাঁসগুলো মইর্যা গেল। এহন আমি খামু কি আর ঋণ দিুম কেমনে।’
শাহীনের ছোট ভাই আবিদ হাসান রনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ঈদের আগে আমার পুকরে ১ লাখ টাকার শিং মাছ মারা গেছে। এখন শাহীন ভাইয়ের খামারে ৫ লাখ টাকার হাঁস মরল। ঋণ করে একটু লাভের আশা করছিলাম। এখন সব শ্যাষ।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল করিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘শনিবার হাসপাতাল বন্ধ ছিল। হাসপাতালে ডাক প্লেগ রোগের ভ্যাকসিন কিছুটা সঙ্কট থাকায় চাহিদা পাঠানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ না করা ও নিয়মনীতি না জেনে হাঁস পালন করায় অনেক সয়ম হাঁস রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তাই ওই খামারির হাঁস প্লেগ রোগেই মারা গেছে কিনা পরীক্ষা-নীরিক্ষা না করে বলা যাচ্ছে না।’