চুয়াডাঙ্গায় চোরাইপথে আসছে ভারতীয় গরু-মহিষ
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে হাত বদলে আসছে ভারতীয় গরু ও মহিষ। প্রশাসনের কড়া নজরদারিতেও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধভাবে গরু-মহিষ প্রবেশ।
এদিকে, পরিত্যক্ত অবস্থায় চোরই গরু-মহিষ উদ্ধার করলেও চোরাকারবারীদের আটক করতে ব্যর্থ হচ্ছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এতে সামনে কোরবানি ঈদ হওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন স্থানীয় খামারিরা।
অন্যদিকে অবৈধভাবে গরু আনার অভিযোগে চুয়াডাঙ্গা ৬ বিজিবি গত তিনদিনে সীমন্তবর্তী দুই গ্রামের ২০ জনের নামে মামলা করেছেন। এরা হলেন- চাকুলিয়া গ্রামের আরাফাত হোসেনের ছেলে সহিদ মিয়া (২৪), সাদেক হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিন (২৬), ছালে আহমদের ছেলে বাবুল মিয়া (২৮), কুদ্দুস আলীর ছেলে কামাল হোসেন (২৭), আবু তাহেরের ছেলে গনি মিয়া (২৮), দৌলত খানের ছেলে মকবুল মিয়া (২৫), হাসেম আলীর ছেলে সম্রাট (২৮), মিজানুর রহমানের ছেলে আমানউল্লাহ (২৪), সামউদ্দিনের ছেলে আব্দুল মমিন (২৫), আব্দুল আলিমের ছেলে আলমগীর (২৩), তাহের আলীর ছেলে আব্দুল গনি (২৮), আব্দুল হাকিমের ছেলে আলাল উদ্দিন (৩৫), হোসেন আলীর ছেলে সম্রাট শেখ (২৫), ঠাকুরপর গ্রামের লোকমান হোসেনের ছেলে বকুল মিয়া(২২), কবীর হোসেনের ছেলে আলমগীর (২৮), আলমগীর হোসেনের ছেলে কামরুল (২৬), আসাদুলের ছেলে ওয়াহিদ (২৪), আজাদ আলীর ছেলে জসিম উদ্দিন (২৬), ফজলু মিয়ার ছেলে আরিফ (২৫), এবং কবীর মিয়ার ছেলে আশেদ আলী (২৪)।
দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের তথ্যে জানা যায়, উপজেলায় খামারগুলোতে এ বছর যে পরিমাণ গরু ছাগল মজুদ আছে, তা আসন্ন কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রফতানি করা সম্ভব।
সীমান্তের নির্ভরযোগ্য এক মুরব্বি (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বার্তা২৪.কমকে জানান- মুন্সিপুর, ঠাকুরপুর, চাকুলীয়া, বাড়াদী সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে এসব গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। চোরাকারবারিরা গভীর রাতে চোরাইপথে সীমান্তবর্তী গ্রামের ভেতরে অথবা বাগানের ভেতরে রাখা হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় হাটে নিয়ে বিক্রি করে।
উপজেলার গরু খামারি খাইরুল আলম বার্তা২৪.কমকে জানান, এবছর তার খামারে ২০টি দেশি জাতের গরু রয়েছে। কোরবানিতে একটু ভালো লাভের আশায় তিনি এখন থেকেই বাড়তি দেখাশোনা করছেন। ভারত থেকে গরু এনে চোরাকারবারিরা যদি স্থানীয় হাটে এসব গরু অল্প দামে বিক্রি করে তাহলে কপাল পুড়বে।
শুধু খাইরুলই নয়, তার মতো অনেকেই আছেন যারা নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ছোট খামার। ভারতীয় গরু যদি এভাবে আসতে থাকে তবে মারাত্মক আর্থিক লোকসানে পড়বেন তারা।
দামুড়হুদা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মশিউর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, উপজেলায় ছোট বড় প্রায় এক হাজার ৪০০ খামার রয়েছে। এসব খামারে প্রায় ৭ হাজার গরু মজুদ আছে। এরমধ্যে ৬ হাজার গরু কোরবানিযোগ্য। আসন্ন কোরবানিতে চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪ হাজার। যা উপজেলার চাহিদা পূরণ করে বাইরে রফতানি করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ৬ বিজিবির পরিচালক ইমাম হাসান বার্তা২৪.কমকে জানান, সাম্প্রতিক সময়ে উভয় দেশের চোরাকারবারিরা ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিএসএফ ও বাংলাদেশের বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্তের বিভিন্ন পথে চোরাই গরু-মহিষ নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তবে এ সমস্যা থাকবে না। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন চোরাকারবারিদের আটক করে মামলা দেওয়া হয়েছে। বাকি যারা আছে তারাও ছাড় পাবে না।
জেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, ভারত থেকে চোরাই পথে যেভাবে গরু মহিষ আসা শুরু হয়েছে তা কোরবানির আগ পর্যন্ত অব্যহত থাকলে স্থানীয় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অতিদ্রুত এই সমস্যার সমাধান না হলে খামারিরা গরু চাষ থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।