বাড়ির শেষ স্মৃতি নারিকেল গাছ

  • হাসান মাহমুদ শাকিল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কমলনগর উপজেলার মতিরহাট এলাকা। ছবি: বার্তা২৪.কম

কমলনগর উপজেলার মতিরহাট এলাকা। ছবি: বার্তা২৪.কম

মেঘনার তীব্র ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারসহ বহু স্থাপনা। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার মানুষের ভিটে-বাড়ি। মেঘনা গিলে খেয়েছে পূর্ব-পুরুষের কবরগুলোও। পুরনো বাড়ির শেষ চিহ্ন এখনো খুঁজে বেড়ান অনেকেই। তেমনি কমলনগর উপজেলার মতিরহাট এলাকায় একটি নারিকেল গাছ বাড়ির শেষ স্মৃতি বহন করছে।

জানা গেছে, মতিরহাট এলাকা থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে ছিল নদীর অবস্থান। ক্রমান্বয়ে মেঘনার ভাঙনে মতিরহাটেও ভাঙন দেখা দেয়। প্রায় অর্ধশতাধিক দোকানও তলিয়ে গেছে। ভাঙন এসে ঠেকেছে মতিরহাট জামে মসজিদের পাশে।

বিজ্ঞাপন

গেল বছর প্রায় ২০০ মিটার বাঁধ নির্মাণ করে বাজার ও মসজিদ রক্ষা করা গেছে। সেই সঙ্গে আবু সাঈদের বাড়ির শেষ স্মৃতি নারিকেল গাছটিও রক্ষা পেয়েছে। ওই গাছটি নদীর তীর রক্ষা বাঁধটি ছুঁয়ে আছে। তবে এখানে বসতবাড়িসহ নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে চরকালকিনি ইউনিয়ন স্বাস্থ কমপ্লেক্সটি।

সরেজমিনে আবু সাঈদের বাড়ির সীমানাতেই মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধ। গাছের ছায়াতে বসে অপলক দৃষ্টিতে নদীর দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি। মনে হচ্ছে মেঘনার মাঝে তিনি কিছু খুঁজছেন। হয়তো স্বপ্ন, কিংবা হারিয়ে ফেলা কিছু মূল্যবান জিনিস। পাওয়ার আশায় তার দৃষ্টি অন্যদিকে সরছেও না। পরে তার সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪.কমের।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/20/1561021641000.jpg

৬০ বছর বয়সী আবু সাঈদ কমলনগর চরকালকিনি ইউনিয়নের মতিরহাট এলাকার মৃত আবদুল জব্বারের ছেলে। তার ৪ ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। পেশায় তিন চা দোকানি।

আবু সাঈদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মতিরহাট এলাকায় ৫০ শতাংশ জমি নিয়ে তাদের বাড়ি ছিল। পাড়া-প্রতিবেশী অনেকেই ছিলেন। কিন্তু প্রায় দুই-কিলোমিটর দূরের বাজারসহ বিস্তীর্ণ জনপদ নদীর ভাঙনে তলিয়ে গেছে। শেষে তাদের বাড়ির প্রায় ৯০ শতাংশ গিলে খেয়েছে মেঘনা। গত বছর বাঁধ দেওয়ায় ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছেন। আর তাদের বাড়ির শেষ চিহ্ন হিসেবে নারিকেল গাছটি ছাড়া আর কিছুই নেই। অন্য গাছগুলোর বয়স ২-৩ বছরের বেশি হয়নি।

সাঈদ বার্তা২৪.কমকে জানান, ছোটবেলায় নদীতে গোসল করতে হলে তাকে ২-৩ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হতো। সখের বসেই নদীর পাড়ে ছুটে যেতেন। কিন্তু এখন ঘর থেকে বের হলেই চোখের সামনে নদী দেখতে পান। সব সময় নদীর পানির ঢেউয়ের শব্দ কানে ভেসে বেড়ায়।

এদিকে গত বছরের নির্মিত বাঁধটিরও কিছু অংশ তলিয়ে গেছে। তাই ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে ফেলার ভয়ে রয়েছে কমলনগরবাসী। কমলনগরের বিস্তীর্ণ জনপদ রক্ষা করতে দ্রুত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে উঁচু বাঁধ নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি।