গুরুর তুষ্টি লাভের আশায় ভক্তদের ‘পায়ে হাঁটা কাফেলা’
আধ্যাত্মিক গুরুর তুষ্টি লাভের আশায় তিন শতাধিক নারী-পুরুষ দীর্ঘ ৬০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে বগুড়ার মহাস্থান শাহ সুলতান বলখী (র.)-এর মাজার যাত্রা শুরু করেছেন। তাদের এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘পায়ে হাঁটা কাফেলা’। তিন দিনের এই কর্মসূচি শুক্রবার (২৮ জুন) মহাস্থানে শেষ হবে।
বুধবার (২৬ জুন) বগুড়ার ধুনট থানার সামনে থেকে শুরু হওয়া পায়ে হাঁটা কাফেলা বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বগুড়ার মাটিডালী এলাকায় পৌঁছায়।
জানা গেছে, প্রতিবন্ধী বাবু শাহ ওরফে বাবু পাগলার জন্য এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী হওয়ায় বাবু পাগলা নিজে হাঁটতে না পারলেও ভক্তরা তার তুষ্টি লাভের আশায় হাঁটা কর্মসূচি পালন করছেন। আর কয়েকজন ভক্ত গুরুকে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যাচ্ছেন।
বুধবার ধুনটের বাবু পাগলার বাড়ির সামনে থেকে শুরু করা এই কাফেলা শেরপুরের পীরপাল মাজারে অবস্থান করে। সেখানে রাত যাপনের পর বৃহস্পতিবার বগুড়া শহরের দিকে আবারও পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করে। দুপুরে তারা যাত্রাবিরতী করেন শাজাহানপুর উপজেলার সাজাপুর এলাকায়। সেখানেই ভক্তরা রান্না করেন। দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে আবারও রওনা করেন বগুড়া শহরের উদ্দেশ্যে।
নেত্রকোনা থেকে কাফেলায় আসা তরিকুল ইসলাম জানান, তিনি ঢাকায় রিকশা চালান। একদিন মিরপুরের একটি মাজারে বাবু পাগলার সাথে পরিচয়। এরপর থেকেই তিনি তার ভক্ত। গুরুর তুষ্টি লাভের আশায় ঢাকা থেকে বগুড়ায় এসেছেন কাফেলায় যোগ দিতে।
শেরপুর ধুনট মোড় এলাকার জহর আলী বলেন, ‘প্রতি বছর আষাঢ় মাসের ১২-১৪ তারিখ পর্যন্ত চলে এই পায়ে হাঁটা কাফেলা।’
বাউল শিল্পী পারুল সরকার, স্বামী বুলবুল সরকার, মেয়ে শিলা সরকার ও এক বছর বয়সী নাতিকে নিয়ে পায়ে হাঁটা কাফেলায় অংশ নিয়েছেন। পারুল সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাবু পাগলা প্রতিবন্ধী হলেও তিনি আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী। ঢাকায় তার সাথে পরিচিত হওয়ার পর পুরো পরিবারই এখন বাবু পাগলার ভক্ত। ছয় বছর আগে মাত্র সাত জন নারী বাবু পাগলার ভক্ত হয়। এখন তার নারী ভক্তের সংখ্যা হাজারেরও বেশি।’
কাফেলায় পারুল সরকারের মতো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আমেনা পাগলী, মল্লিকা পাগলী, লায়লা, চুমকীসহ অনেকেই যোগ দিয়েছেন কাফেলায়।
বাবু শাহ ওরফে বাবু পাগলা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘২০১৩ সালের ২৬ জুন মাত্র ২৫ জন ভক্ত নিয়ে এই কাফেলা শুরু হয়। এখন তার কাফেলায় ভক্ত রয়েছেন তিন শতাধিক।’
আধ্যাত্মিক শক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার ভক্তরাই বলবে। আমার মধ্যে তারা কী পেয়েছে? কেন তারা দূর-দূরান্ত থেকে আমার কাছে আসে? আমি তো কারো কাছে যাই না? ভক্তরাই আমার কাছে ছুটে আসে, আমি প্রতিবন্ধী, নিজে হাঁটাচলা করতে পারি না। ভক্তরা আমার কাছে কী শান্তি পান- তারাই বলতে পারবেন।’