শিক্ষক হতে চান প্রতিবন্ধী আরজিনা
জন্মের পর থেকেই শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী আরজিনা খাতুন। তার দু’পায়ের পাতা থেকে হাঁটু পর্যন্ত বাইরের দিকে বাঁকানো। আর ডান হাতের তালু পর্যন্ত থাকলেও ছোট ছোট আঙ্গুল দিয়েই তিনি লেখাপড়া চালিয়েছেন।
নিজের প্রবল চেষ্টা আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে এসএসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছেন। এখন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে (সম্মান) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়ন করছেন।
কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া এলাকার দিনমজুর মজনু বিশ্বাসের তিন সন্তানের মধ্যে ছোট আরজিনা। আর দশটা স্বাভাবিক শিশুর মতো বেড়ে উঠতে পারেননি তিনি।
তবে শৈশব থেকেই পড়ালেখায় ছিল ব্যাপক আগ্রহ। কখনো মায়ের আবার কখনোবা বোনের কোলে চড়ে তাকে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিক স্কুলে যেতে হয়েছে। এখনো কয়েক কিলোমিটার গড়াই নদীর চর পাড়ি দিয়ে তার মা শরীফুন্নেছা কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে নিয়ে যান প্রতিনিয়ত।
আরজিনার ভাই মো. মুকুল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা এবং অভাবের সংসারে বাবা ঠিকমতো পড়ানোর খরচ জোগাতে পারতো না। তবুও আমরা নিজেদের প্রচেষ্টায় পড়ালেখা চালিয়েছি। ছোটবোন আরজিনার অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে পড়ালেখা চালিয়ে যান। এসএসসি পরীক্ষার পরে টাকার অভাবে আরজিনার পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে তাকে নিয়ে খবর প্রকাশিত হলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সৈয়দ বেলাল হোসেনের নজরে আসে। পরে তাকে ডেকে নিয়ে তার পড়ালেখার জন্য প্রতিমাসে এক হাজার টাকা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন ডিসি।
আরজিনার বড় বোন মুসলিমা খাতুন বার্তা২৪.কমকে বলেন, জন্মের পর থেকেই আরজিনা শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাকে স্কুলে আনা-নেওয়ার জন্য আমি এবং আমার মা সব সময় নিয়ে যেতাম। তার ভীষণ ইচ্ছা স্কুলশিক্ষক হওয়ার। আগামী ২৮ জুন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেবে সে। তার চাকরিটা হলে আমাদের সবার স্বপ্ন পূরণ হবে। আমাদের এই অসহায় পরিবারটিও বেঁচে যাবে।
আরজিনা খাতুন বলেন, শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। আমি প্রতিবন্ধী তাতে কী! আমি পরিবারের বোঝা হতে চাই না। পড়ালেখা শিখেই শিক্ষক হয়ে পরিবারকে সহযোগিতা করার স্বপ্ন দেখতাম ছোটবেলায় থেকেই। এবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছি, সবার দোয়া চাই।