হবিগঞ্জে মোটরসাইকেল চুরির হিড়িক!

  • কাজল সরকার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, হবিগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ত্র দেখিয়ে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনা সিসিটিভিতে ফুটে ওঠে, ছবি: সংগৃহীত

অস্ত্র দেখিয়ে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনা সিসিটিভিতে ফুটে ওঠে, ছবি: সংগৃহীত

হবিগঞ্জ শহরে হঠাৎ করেই মোটরসাইকেল চুরির হিড়িক পড়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা এমনকি আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরাও রক্ষা পাচ্ছে না মোটরসাইকেল চোর চক্রের হাত থেকে।

এদিকে, গত ২৫ জুন অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় জনমনে আরও আতঙ্ক বেড়েছে। চুরি ঠেকাতে প্রশাসনকে আরও কঠোর হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল।

বিজ্ঞাপন

সূত্রে জানা যায়, মোটরসাইকেল চুরির অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে হবিগঞ্জ। প্রতিনিয়ত দিন-দুপুরের একে পর এক চুরির ঘটনা ঘটছে। গত ৬ মাসে জেলা শহর থেকে অন্তত ৪০টি মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। প্রতিনিয়ত এই চুরির ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জেলাবাসীরা। বিভিন্ন সময় চুরির ঘটনাগুলো সিসি টিভি ফুটেজে ধরা পড়লেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি মোটরসাইকেলগুলো।

এদিকে, সম্প্রতি চুরির মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাংবাদিক, পুলিশ এমনকি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তার মোটরসাইকেল চুরি করতেও দ্বিধা করছে না তারা। বিভিন্ন সময় আসামিদের গ্রেফতার করলেও আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেড়িয়ে এসে আবারও মোটরসাইকেল চুরির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে। মোটরসাইকেল চুরি ঠেকাতে বিভিন্ন সময় পুলিশ রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় কয়েক শতাধিক মোটরসাইকেল জব্দ করে মামলা দিয়েও কমছে না চুরির ঘটনা।

বিজ্ঞাপন

গত ২৫ জুন অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায় এক চোর। এ সময় ধাওয়া করেও তাকে ধরা সম্ভব হয়নি। তবে সম্পূর্ণ বিষয়টি ধরা পরে অফিসের সিসি টিভি ক্যামেরায়।

এর আগে গত ৯ জুন হবিগঞ্জ জজ কোর্ট এলাকা থেকে একজন আইনজীবীর সহকারীর মোটরসাইকেল চুরি হয়। ১৩ মে জেলা পরিষদের সামনে থেকে স্থানীয় সাংবাদিক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবর রহমান আওয়ালের মোটরসাইকেল চুরি করে তিন ব্যক্তি। এ বিষয়টিও সিসি টিভি ফুটেছে রেকর্ড হয়। এ ঘটনাগুলো ছাড়াও গত ৬ মাসে অন্তত ৪০টি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে।

তবে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মাসে চুরি হওয়া ৩০টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে মোটরসাইকেল চোর চক্রের ৪৪ জন সক্রিয় সদস্যকে। আর রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে অন্তত ৫ শতাধিক।

এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী সানাউল হক বলেন- ‘মোটরসাইকেল চুরি হবিগঞ্জে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। ৫ মিনিটের জন্য মোটরসাইকেল রেখে যাওয়া যায় না। এর মধ্যেই চুরি হয়ে যায়।’

অন্য এক ব্যবসায়ী মো. রফিক মিয়া বলেন- ‘আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর দায়িত্বে অবহেলা ও আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকার কারণে এভাবে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোটরসাইকেল বাইরে রেখে শান্তিমতো খাবার খাওয়া যায় না। এর মধ্যেই চুরি হয়ে যায়।’

শহরের পুরানমুন্সেফি এলাকার বাসিন্দা শেখ নাজমুল হক বলেন- ‘সেদিনের ঘটনাটির কথা ভাবলে শরীর কাটা দেয়। হবিগঞ্জে অস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাই বা চুরি করতে কখনো শুনিনি। কিন্তু সম্প্রতি অস্ত্র দেখিয়ে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। তাও আবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার সাইকেল।’

তিনি বলেন- ‘যেখানে আইনের লোকরা নিরাপদ নয়, সেখানে আমরা সাধারণ মানুষ কী করব?’

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন- ‘আমরা প্রতিনিয়ত মোটরসাইকেল চোর আটক করে কারাগারে প্রেরণ করছি। কিন্তু আইনের ফাঁক দিয়ে তারা বেড়িয়ে এসে আবারও চুরি করে। এছাড়া অনেক সাইকেল উদ্ধারও করে দিয়েছি।’

তিনি বলেন- ‘রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত আমাদের অভিযান চলছে। এ অভিযান আরও বেগবান করা হবে।’