ভদ্রাবতী নদী এখন অভিশাপ!

  • গনেশ দাস, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, বগুড়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

খননের অভাবে খালে পরিণত হয়েছে ভদ্রাবতী নদী, পানিও দূষিত

খননের অভাবে খালে পরিণত হয়েছে ভদ্রাবতী নদী, পানিও দূষিত

এলাকাবাসীর অভিশাপে পরিণত হয়েছে বগুড়ার ভদ্রাবতী নদী। মেডিকেল কলেজ ও সরকারি ওষুধ কারখানার বর্জ্যে নদীর পানি এতটাই দূষিত হয়েছে যে, মাছ মরে ভেসে উঠছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড মৃত প্রায় ভদ্রাবতী নদীর পাঁচ কিলোমিটার খনন করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিলেও তা কোন উপকারে আসেনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে,  ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ভদ্রাবতী নদী শাজাহানপুর উপজেলার সাবরুল বিল থেকে উৎপত্তি হয়ে আঁকাবাঁকা পথে খরনা ইউনিয়নের কুন্দাদেছমা, শিবদেগুমা সাতকাউনিয়া, দেছমা, ভাদাইকান্দি, লাতাগাড়ি হয়ে বগুড়া পৌরসভার ১৩ নং ওয়ার্ডের সীমানা ঘেঁষে বেতগাড়ি এলাকায় বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কে ফটকি ব্রিজ পার হয়ে সাজাপুর গ্রামের মধ্য দিয়ে সুজাবাদ এলাকায় গিয়ে করতোয়া নদীতে পড়েছে।

নদীর পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দারা জানান, এক সময় ভদ্রাবতী নদীতে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ পাওয়া যেত। সুস্বাদু এই মাছের চাহিদাও ছিল ব্যাপক। পাশাপাশি নদীর পানি ব্যবহার হতো গৃহস্থালি বিভিন্ন কাজে। কিন্তু বছরের পর বছর সংস্কার এবং খননের অভাবে নদীটি ভরাট হয়ে খালে পরিণত হয়।

চলতি বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড করতোয়া নদীর মিলিত স্থান থেকে পশ্চিম দিকে পাঁচ কিলোমিটার খনন করে। ফলে এই পাঁচ কিলোমিটার অংশে নদীটি পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। খননের পর নদীর স্রোত বাড়লেও পানি দূষিত হয়েছে আগের তুলনায় অনেক বেশি। নদীর পানি কালো হয়ে এতটাই দূষিত হয়েছে যে, মাছ মরে ভেসে উঠছে।
https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/30/1561908539759.jpg
নদীর  উত্তর পাড়ের বেতগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বার্তা২৪.কমকে বলেন, নদীতে মাছ তো অনেক আগেই উধাও হয়ে গেছে। এখন পানি এতটা দূষিত যে, ব্যবহার করলে চর্মরোগে আক্রান্ত হতে হয়।

সুজাবাদ গ্রামের আজিজুর রহমান ১২-১৩ বছর ধরে ভদ্রাবতী নদীতে খরা জাল দিয়ে মাছ ধরে আসছেন। তিনি বলেন, এক সময় বর্ষাকালে সারা রাতে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ ১০-১২ কেজি পাওয়া যেত। কিন্তু নদীর পানি দূষিত হয়ে যাওয়ায় এখন সারা রাতে আধা কেজিও মাছ পাওয়া যায় না। পানি এতটাই দূষিত যে, ছোট ছোট মাছগুলো মরে ভেসে উঠছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী খননে এলাকাবাসীর কোন উপকারে আসেনি বলেও জানান আজিজুর রহমান।

বগুড়া পৌরসভার ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর খোরশেদ আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ভদ্রাবতী নদী এখন এলাকাবাসীর জন্য অভিশাপ। ছোট এই নদীর পানি দূষিত নয়, বিষাক্ত! শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি ছাড়াও বগুড়া পৌরসভার ৮, ৯, ১২, ১৩ ও ১৪ নং ওর্য়াডের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় উল্লেখিত এলাকার বর্জ্য ভদ্রাবতী নদীতে আসে। পৌরসভার বৃহৎ পরিকল্পনা না থাকায় ভদ্রাবতী নদীকে বাঁচানো যাচ্ছে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, মৃত প্রায় ভদ্রাবতী নদীর পশ্চিম দিকে করতোয়া নদীর মিলিত স্থান থেকে পাঁচ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে চলতি অর্থবছরে। আগামী বছর আরো কিছু অংশ খনন করে নদীটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।