ব্রিজে ফাটল: ইউএনও’র নির্দেশ অমান্য করে বিল পরিশোধ
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে নকশা বহির্ভূত ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শেষ না হতেই বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। কাজ পুরোপুরি বুঝিয়ে দেওয়া পর্যন্ত ঠিকাদারকে বিল না দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসকে (পিআইও) নির্দেশ দেন রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
কিন্তু ইউএনওর নির্দেশ অমান্য করে দায়িত্বপ্রাপ্ত পিআইও রোববার (৩০ জুন) ঠিকাদারকে ২৪ লাখ ৩০ হাজার ২২৯ টাকার চূড়ান্ত বিল বুঝিয়ে দেয় পিআইও।
অভিযোগ রয়েছে, নকশা বহির্ভূত ও ফাটল ব্রিজের কাজ শেষ না হতেই ঠিকাদারের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে পিআইও বিলটি দিয়েছে। তবে পিআইওর দাবি, ইউএনওর নির্দেশেই ঠিকাদারকে বিলটি দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় রামগঞ্জ উপজেলার লামচর ইউনিয়নের দাসপাড়ায় ওয়াপদা খালের ওপর ব্রিজটির বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে ব্রিজ নির্মাণে ৩২ লাখ টাকা বরাদ্দের টেন্ডারটি পান লক্ষ্মীপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাফলং। গত মার্চ মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিজটির কাজ শুরু করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুরু থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্রিজে রড ও সিমেন্ট কম দেওয়ার অভিযোগ আনে স্থানীয়রা। উপকরণগুলোও নিম্নমানের ছিল। এছাড়া সরকারি কাজে তদারকির অভাব ছিল। এতে মানহীন কাজ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ব্রিজের পূর্বপাশে ভ্যাকু মেশিন দিয়ে উইংওয়ালের নিচ থেকে মাটি ভরাট করা হয়। এতে ব্রিজের একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দেয়। পরে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়ে কাজ বন্ধ রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
অন্যদিকে, গত ২৪ জুন রামগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোশারেফ হোসেন ব্রিজটি পরিদর্শনে গেলে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়ে।
অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাফলংয়ের মালিক মো. সেলিম বলেন, ‘চূড়ান্ত বিল উত্তোলন করা হয়েছে। ব্রিজ নির্মাণে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। মাটি ভরাট করার সময় অতিরিক্ত চাপে ব্রিজটি ফাটল দেখা দেয়। ১০০ ফুটের খালের ওপর ৪০ ফুটের ব্রিজ নির্মাণ করতে গিয়ে পানির প্রবাহে কাজ করতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।’
রামগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, ‘ফাটল ব্রিজ পরিদর্শন করেছি। ঠিকাদার কাজটি নিয়মতান্ত্রিকভাবে করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইউএনওর নির্দেশেই ঠিকাদারকে বিল দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মোহাম্মদ রিজাউল করিম বলেন, ‘ব্রিজে ফাটল দেখা দেওয়ায় বিল না দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পুরো কাজ আদায় করে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। পরে এ বিষয়ে পিআইওর সঙ্গে কোন কথা হয়নি।’