ভিক্ষুক জহির উদ্দিন এখন ব্যবসায়ী

  • গনেশ দাস, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জহির উদ্দিন। ছবি: বার্তা২৪.কম

জহির উদ্দিন। ছবি: বার্তা২৪.কম

পঙ্গু জহির উদ্দিন (৬৫) ২৫ বছরের ভিক্ষা বৃত্তির অবসান ঘটিয়ে এখন একজন ব্যবসায়ী। অবশ্য এই ব্যবসায়ী হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রয়েছে বগুড়া পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বিপিএমের। তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে জহির উদ্দিন পেয়েছেন মুদি দোকান।

জহির উদ্দিন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের বিহারপুর গ্রামের বাসিন্দা।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, যৌবনকালে জহির উদ্দিন কাজ করতেন ধান ভাঙার মিলে। একদিন কাজ করার সময় মিলের ফিতায় জড়িয়ে দুই পায়ে আঘাত পান। কয়েক বছর চলাফেরা করতে পারলেও পরবর্তীতে এক পা কেটে ফেলতে হয়। ভিটে মাটি বিক্রি করে অপর পায়ের চিকিৎসা করা অবস্থায় সেটিও কেটে ফেলতে হয়। এরপর তিন সন্তান রেখে স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে যায়। দুই পা হারিয়ে নিঃস্ব জহির উদ্দিন বেছে নেয় ভিক্ষা বৃত্তি। প্রথমে ঢাকায় ভিক্ষা করলেও কয়েক বছর পর গ্রামে ফিরে আসেন তিনি।

এদিকে মাত্র কয়েকদিন আগেও রাস্তায় বসে জহির উদ্দিনকে ভিক্ষা করতে দেখা গেছে। ওই সময় সারাদিন ভিক্ষা করে ২৫-৩০ টাকা পেতেন তিনি। তাই দিন চলত খেয়ে না খেয়ে। কারণ ছেলে আর ছেলের বউ জহির উদ্দিনকে দেখতে পারত না। এভাবেই চলছিল তার দিন।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/02/1562071308400.jpg

হঠাৎ করেই জাগো বগুড়া নামের একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পঙ্গু জহির উদ্দিনের সন্ধান পায়। সংগঠনের নেতারা জহির উদ্দিন সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে তার অসহায়ত্বের বিষয়টি জানান বগুড়া পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বিপিএমকে। এরপর পুলিশ সুপার উদ্যোগ নেন পঙ্গু জহির উদ্দিনকে ভিক্ষা বৃত্তি থেকে ফিরিয়ে আনার। পুলিশ সুপারের অর্থায়নে এবং জাগো বগুড়ার নেতাদের সহযোগিতায় দোকান তৈরি এবং মালামাল কেনা হয়। গত ২১ জুন বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা দোকানটি উদ্বোধন করেন এবং জহির উদ্দিনকে বুঝিয়ে দেন।

বর্তমানে দোকানে বিক্রিও বেশ ভালো। দোকান থেকে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশ টাকা লাভ করেন তিনি। এ কারণে পঙ্গু জহির উদ্দিনের সেবা যত্ন করে সবাই।

জহির উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ওই পুলিশের জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কিছু করার নাই আমার। কোনো দিন ভাবতেও পারিনি আমাকে আর ভিক্ষা করতে হবে না।’

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগো বগুড়ার সভাপতি আতিক রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বিহারপুর গ্রামের পথে যাওয়ার সময় জহির উদ্দিনকে ভিক্ষা করতে দেখি। এরপর তার মুখে সবকিছু শুনে সহযোগিতার জন্য বগুড়া পুলিশ সুপারকে আহ্বান জানাই। তিনি বিস্তারিত শুনে জহির উদ্দিনকে ভিক্ষা বৃত্তি থেকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। জহির উদ্দিন ভিক্ষুক থেকে আজ ব্যবসায়ী।’