রেলওয়ে সেতু যেন মরণফাঁদ!

  • জাহিদ পাটোয়ারী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুমিল্লা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

লাকসামের এই রেলসেতুর স্লিপার নষ্ট হয়ে আছে/ ছবি: বার্তা২৪.কম

লাকসামের এই রেলসেতুর স্লিপার নষ্ট হয়ে আছে/ ছবি: বার্তা২৪.কম

কুমিল্লার লাকসাম রেলওয়ে জংশন থেকে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও চাঁদপুর রুটে রাত-দিন অসংখ্য ট্রেন চলাচল করে। রুটগুলোর মধ্যে লাকসাম-চট্টগ্রাম ডাবল লাইনের পর লাকসাম-আখাউড়া ডাবল লাইনের কাজ চলছে।

অন্যদিকে, লাকসাম-নোয়াখালী ও লাকসাম-চাঁদপুর রুটের বিভিন্ন স্থানে রেলসেতুর অবস্থা নাজুক। আর লাইনের অনেক স্থানে রয়েছে ভাঙা স্লিপার, ক্লিপ-হুক, খোলা নাটবল্টু ও ফিশপ্লেট। এতে করে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিন দেখা গেছে, লাকসাম পৌরসভার পেয়ারাপুর রেল সেতুটির অনেক স্থানে স্লিপার ভাঙ্গা, পচে খসে খসে পড়ছে। আর নিচ থেকে রেল সেতুর মূল অংশের সাথে স্লিপারের সংযোগকারী হুক বোল্ড সরে গেছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/03/1562154650821.jpg

বিজ্ঞাপন

উপজেলার কাগৈয়া সেতুর অবস্থা আরও খারাপ। সেতুটির অনেকগুলো স্লিপার ভাঙা ও পচে গেছে। অনেক স্থানে নাটবল্টু, ক্লিপ-হুক, ফিশপ্লেট খোলা। লাকসাম রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে চিতোষী রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত মূল আতঙ্কের বিষয় হলো- সেতুটির মূল অংশের লোহার প্লেটগুলোর সংযোগকারী স্থায়ী জয়েন্টগুলো মরিচা ধরে খসে গেছে। আবার সেতুর মূল লোহার প্লেটের সাথে স্লিপারের সংযোগকারী এঙ্গেল নাটের ৯৫ ভাগেরই কোনো সংযোগ নেই। এতে অনেকটা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে সেতুটি।

মমতাজ মিয়া নামে পেয়ারাপুর এলাকার বাসিন্দা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রেললাইনের হুকবোল্ডগুলো খোলা থাকায় ব্রিজের নিচের দিকে চোখ গেলে বুক ধড়পর করে উঠে। অনেকগুলো স্লিপার পচে খসে খসে পড়ছে।’

কাগৈয়া রেলসেতুর পশ্চিমপাড়ে ফুলহরা গ্রামের মোবারক হোসেন, শাহেদ ও আনোয়ার জানান, এ সেতুতে ট্রেন উঠলে বিকট শব্দ হয়। ব্রিজের হুকবোল্ডগুলোর ৯৫ ভাগ খোলা। বেশিরভাগ স্লিপার ভাঙ্গা, হুক, ফিশপ্লেট, নাটবল্টু খোলা। এ ব্রিজের উপর দিয়ে স্থানীয় কাগৈয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/03/1562154684107.jpg

দেখা যায়, লাইনে নির্ধারিত দূরত্বে (প্রায় ৪০-৫০ ফুট) পয়েন্ট রয়েছে। এসব পয়েন্টের মধ্যে দুই পাশে আটটি করে মোট ১৬টি নাট-বোল্টুসহ ১৬টি হুক-ক্লিপ থাকার কথা। কিন্তু অধিকাংশ পয়েন্টের মধ্যে ১৬টির স্থলে পাঁচ থেকে সাতটি রয়েছে। অধিকাংশ লাইনের পয়েন্ট (জোড়ার স্থল) নাটবল্টু খোলা, এসব পয়েন্ট দিয়ে ট্রেন চলাচল করলে বিকট শব্দ হয়। অধিকাংশ স্লিপারের সঙ্গে লাইন লাগানো নয়। ক্লিপ খোলা, ফিশপ্লেট খোলা। হুক খোলা। কোথাও কোথাও কিছু পাথর আছে। আবার কোথাও একেবারেই পাথর নেই।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক প্রকৌশলী বার্তা২৪.কম-কে জানান, পুরো রেলে হাজার হাজার স্লিপার জরাজীর্ণ রয়েছে। নাটবল্টু, হুক-ক্লিপ, ফিশপ্লেট খোলা অবস্থায় রয়েছে। এসব মেরামত কিংবা পূরণে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাথাব্যথা নেই। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তথা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ শুধু প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘গত কয়েক বছরে যেসব ওয়েম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা মাঠে কাজ করতে চান না। তাদের কিছু বলাও যায় না। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গালমন্দ পর্যন্ত করছে তারা। একই অভিযোগ রয়েছে পশ্চিমাঞ্চলে কর্মরত ওয়েম্যানদের বেলায়ও। মাঠ পর্যায়ের এসব কর্মচারীদের কেউ কেউ আবার কর্মকর্তাদের বাসায় কাজ করছেন।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/03/1562154702219.jpg

লাকসাম রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার কামরুল হাসান তালুকদার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘লাকসাম রেলওয়ে জংশন ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সিলেট, চাঁদপুর পাঁচটি রেলপথের মোহনা। লাকসাম রেলওয়ে জংশনের পাঁচটি রেলপথে প্রতিদিন আন্তঃনগর, লোকাল, কমিউটার ও মেইল ট্রেনসহ ৩৮টি ট্রেন আসা-যাওয়া করে।’
পূর্বাঞ্চল রেলপথের লাকসাম অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী (আইডব্লিউ) মোঃ জিল্লুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘নিয়মিত রেলপথের মেরামত কাজ হয়। একবারে এ কাজ শেষ হয় না। তবে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এ অঞ্চলের রেললাইন ও সেতুগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। শীঘ্রই সেতুগুলোর সংস্কার শুরু হবে এবং যেসব স্থানে পাথর নেই, সেসব স্থানে পাথর দেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে।’