মেঘনাপাড়ের গাছগুলোও একটি ইতিহাস!
‘হাজারো দিবস অতিক্রম করে দাঁড়িয়ে আছি পৃথিবীতে। নতুন প্রজন্মকে জানান দিতে, আমরা এক ইতিহাস। কারণ, বহু বছর পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকার প্রবল ইচ্ছা ছিল। স্বপ্নটি শুরু মানুষের হাত ধরে। নদীর ভাঙনে সেই স্বপ্নটি এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে তাড়া করছে। তবে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে নদীর ঢেউয়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছি। সৃষ্টিকর্তাই জানে আর কতদিন এভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারব।’
এমন কথাগুলোই যেন চিৎকার করে বলে যাচ্ছে মেঘনা তীরবর্তী রেইনট্রি গাছ দুটি।
রেইনট্রি, আঞ্চলিক ভাষায় এর নাম করই গাছ। তবে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মতিরহাট মেঘনা নদীর পাড়ের করই গাছ দুটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারা শুধু দুটি গাছ নয়, একটি ইতিহাস। আর ইতিহাস নামেই তারা পরিচিত হতে চাচ্ছে। তবে যেকোনো সময় মেঘনার করাল গ্রাসে ইতিহাসটুকুও হারিয়ে যাবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাঙনে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের নদীটি এখন গাছগুলোর প্রান্তে এসে ঠেকেছে। জোয়ার এলেই নদীর ঢেউ গাছগুলোর উপর আঁচড়ে পড়ছে। সরে গেছে গাছের তলার মাটিও। তবে শক্ত শেকড় দিয়ে গাছগুলো মাটির তলদেশ আঁকড়ে ধরে আছে বাঁচার জন্য। মাটি সরে যাওয়ায় শেকড়ের মাঝখান দিয়ে চার পাশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
এর পাশেই চরকালকিনি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নদীর করাল গ্রাসে ভেঙে গেছে। এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বাকি অংশটুকু।
জানা গেছে, প্রায় ২৭ বছর ধরে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদী ভাঙছে। এরমধ্যে রামগতি ও কমলনগরের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন নদীগর্ভে। এতে বিলীন হয়ে গেছে ৩১টি বড় হাট-বাজার, ৩৫ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, ৩০টি সাইক্লোন শেল্টার, ৫২টি মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার, ৪০০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক, ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে তলিয়ে গেছে ৫০ হাজার একর ফসলি জমি ও ৪৫ হাজার ঘরবাড়িসহ কয়েক হাজার কোটি টাকার সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা।
এ বিষয়ে মতিরহাট এলাকার মোহাম্মদ ইউছুফ মিয়া জানান, গাছগুলো যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে কয়েকটি ঘর ছিল। নদীর ভাঙনে সব তলিয়ে গেছে। সেখানকার গৃহস্থরাও কয়েক বছর আগে চলে গেছে। এখন গাছগুলো নদীর কিনারা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। তবে গাছের নিচ দিয়ে চারপাশ দেখা যাচ্ছে। গাছ দুটি পর্যটকদের মনে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের জন্ম দেয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে কমলনগর-রামগতি রক্ষায় ৩৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প পাশ হয়। প্রথম পর্যায়ে রামগতিতে সাড়ে ৪ এবং কমলনগর উপজেলায় ১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি।
এদিকে নদীর তীর রক্ষা বাঁধের দাবি ও এই দুই উপজেলার প্রায় ৭ লাখ মানুষের ভিটে-বাড়ি রক্ষায় সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।