সুরমায় পানি বিপদসীমার ওপরে, বন্যার পূর্বাভাস
গত চারদিনের টানা প্রবল বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার (৯ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে সুনামগঞ্জে বন্যার সতর্কবার্তা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।
স্থানীয় বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, ভারতের মেঘালয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। গত তিন দিনের বর্ষণ ও ঢল অব্যাহত রয়েছে। রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতে সুরমা, জাদুকাটা, সোমেশ্বরী, খাসিয়ামারা, চেলাসহ সীমান্তবর্তী বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়েছে। প্রধান নদী সুরমার পানি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ঢল ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থাপনা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলাটিতে ১৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এতে ইতোমধ্যেই পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের মানুষ। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত আছে। একারণে নদী ও হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার ও জামালগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে নিন্মাঞ্চলের বসতবাড়ি।
শক্তিয়ারখলা গ্রামের বাসিন্দারা জানান, পাহাড়ি ঢলে তাহিরপুর-আনোয়রপুর-আনোয়ারপুর-বিশ্বম্ভরপুর সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রভাবিত হচ্ছে। এতে দুই উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। এই সড়কটির দূর্গা অংশ পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাত হলেই বর্ষা মওসুমে সাময়িক তলিয়ে যায়।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, তাহিরপুর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ তাহিরপুর-বাদাঘাট, বাদাঘাট সোহালা, বাদাঘাট-টেকেরঘাট-বাগলী সড়কও ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের একাধিক স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানিতে ডুবে যাওয়ার ফলে জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িক বন্ধ রয়েছে। এতে জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সর্তক অবস্থানে আছেন সবাই।
এদিকে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সব উপজেলায় স্থানীয় পর্যায়ে উদ্ধার টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলায় তিন হাজার ৭৩৫ প্যাকেট শুকনা খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা ও উপজেলার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকা ও সব উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ।