সপ্তাহে ৬ দিন রেলপথে চলবে ঢাকা-বেনাপোল এক্সপ্রেস
ঢাকা-বেনাপোল রেল রুটে যাত্রীসেবায় এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নকে সত্যি করে চালু হতে যাচ্ছে ঢাকা-বেনাপোল এক্সপ্রেস।
চলতি মাসের ১৭ জুলাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেনটির শুভ উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে। উদ্বোধন শেষে বেনাপোল থেকে দুপুর সোয়া একটায় ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে যাবে। উদ্বোধনকালে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, রেলওয়ে পরিচালক মো. শামছুজ্জামানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বেনাপোল থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেবেন।
বেনাপোল রেলস্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে জানান, ট্রেনটিতে ১২টি বগি থাকবে। এর আসন সংখ্যা হবে ৯০০। ট্রেনের ভেতর এসি চেয়ারের জন্য থাকবে দু’টি বগি এবং কেবিন থাকবে ১টি বগিতে। বেনাপোল এক্সপ্রেসের ননএসি শোভনের টিকিট হবে ৪৮৫ টাকা, এসি চেয়ারের ভাড়া হবে ৯৩২ টাকা এবং কেবিনের ভাড়া হবে ১১১৬ টাকা। ট্রেনে ৫ ও ৮ সিটের কেবিন থাকবে। সপ্তাহে ৬ দিন বিরতিহীনভাবে বেনাপোল এক্সপ্রেস নামে ট্রেনটি চলবে। এ সেবা চালু করতে স্টেশন এলাকায় দ্রুত গতিতে কাজ চলছে।
জানা যায়, আধুনিক এই ট্রেনের কোচগুলো (বগি) ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেনটি ইতোমধ্যে রাজশাহী অঞ্চলে চালানো হয়েছে। এ ট্রেনে বিমানের মতো বায়ো-টয়লেট সুবিধা রয়েছে। এর আসনগুলোও আধুনিক। প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ট্রেনটি বেনাপোল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। আবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা থেকে বেনাপোলের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে। সকাল আটটার মধ্যে ট্রেনটি বেনাপোল স্টেশনে পৌঁছে যাবে। যাত্রীরা অনলাইনেই ট্রেনটির টিকিট সংগ্রহ করতে পারবে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে জানান, এ রুটে প্রথম পর্বে আসছে ঢাকা-বেনাপোল আন্তঃনগর ট্রেন। এরপর আসবে ভারতের সঙ্গে রেল কার্গো সার্ভিস। এর আগে ১০ এপ্রিল এ সেবা চালুতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘যৌথ ইশতেহার এবং উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য কাঠামোগত চুক্তির আওতায় (রেলপথ বিষয়ে) উপ আঞ্চলিক সহযোগিতা’ সংক্রান্ত এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশেষ আমন্ত্রণে বেনাপোল কাস্টম হাউজের পক্ষে তিনিসহ এ বন্দরে বাণিজ্যের সঙ্গে সংশিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ পথে যাত্রীসেবায় এ রেল চালুতে সব শ্রেণীর মানুষেরা উপকৃত হবেন।
ভারত -বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট, এমপোর্ট ও এক্সপোর্ট সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে জানান, দেশে স্থলপথে যে বাণিজ্য হয়, তার ৭০ শতাংশ হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। ব্যবসায়িক প্রয়োজন, চিকিৎসা ও ভ্রমণের কাজে এ পথে মানুষ বেশি ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু সড়ক পথে বাসে সীমাহীন দুর্ভোগে তাদের যাতায়াত করতে হয়। বিশেষ করে সড়কে বাসে অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ব আর
দুর্ঘটনা তো লেগেই থাকে। এপথে রেলসেবা চালু হলে যাত্রীরা এমন ক্ষতির হাত থেকে অনেকটা রক্ষা পাবে।
বেনাপোল সি আ্যান্ড এফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সফিজুর রহমান সজন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে জানান, এ রুটে প্রায়ই বাস সংকটে দূর-দূরান্তের যাত্রীদের আটকে পড়ে ভোগান্তি ও অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হতে দেখা যায়। তাদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এ পথে রেলসেবা চালুতে এখন দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে সাধারণ যাত্রীরা।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি আমিনুল হক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, বন্দর থেকে আমদানি ও রফতানি করা পণ্য ছাড়করণের কাজে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কখনো বাসে বা কুরিয়ার সার্ভিসযোগে নিয়ে আসতে হয়। কিন্তু অনেক সময় রাস্তায় কিংবা ফেরিঘাটে যানজটে যানবাহন আটকে সেটি সময় মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনা। এতে দ্রুত পণ্য খালাস প্রক্রিয়া ব্যহত হয়। এখন ঢাকা-বেনাপোল রুটে যাত্রীবাহী রেল সার্ভিস চালু হওয়া মানে বন্দর এলাকায় বাণিজ্য আরও গতিশীল হলো।
সড়কপথে ভারতগামী পাসপোর্টধারী যাত্রী অনিতা দাস বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে জানান, দেশ ভাগ হলেও ভারতের সঙ্গে এখনও অনেকের আত্মীয়ের বন্ধন রয়ে গেছে। এ কারণে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে এবং ভালো চিকিৎসা পেতে তাদের প্রায়ই ভারতে যেতে হয়। ভারত থেকেও তাদের অনেক আত্মীয় বাংলাদেশে আসে। হরতাল, অবরোধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাত্রীরা সড়কপথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে আটকে পড়ে দুর্ভোগের শিকার হয়। এখন যেহেতু এ পথে যাত্রীবাহী রেল চালু হচ্ছে, সেহেতু তারা অনেক উপকৃত হবেন।
জানা যায়, বেনাপোল রুটে ভারতের সঙ্গে এর আগেও যাত্রীসেবায় রেল সার্ভিস চালু ছিল। তবে দেশ স্বাধীনের পর পরই তা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে বছর দশেক আগে দুই দেশের সরকারের প্রচেষ্টায় পণ্য পরিবহনে আবারও চালু হয় কার্গো সার্ভিস। পরে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর শুরু হয় খুলনা-বেনাপোল-কলকাতা রুটে বন্ধন রেলের যাত্রীসেবা।