ভারী বর্ষণ: কারও পৌষমাস, কারও সর্বনাশ!
গত তিনদিনে ভারী বর্ষণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমিসহ ঘরবাড়ি। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন সারাদেশের কয়েক লাখ মানুষ। এই বন্যা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাননি হবিগঞ্জের মানুষও। কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী অন্তত ৭০/৮০টি গ্রামের মানুষ এই সীমাহীন দুর্ভোগে রয়েছেন। পানিবন্ধি হয়ে পড়েছেন অন্তত ৫০টি গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন তারা।
এদিকে, ভারি বর্ষণ নদী তীরবর্তী মানুষের জন্য সীমাহীন দুর্ভোগ বয়ে আনলেও আশীর্বাদ হয়ে এসেছে হাওরের মানুষের জন্য। পানিশূন্য হাওরের কানায় কানায় পূর্ণতা পেয়েছে অথৈই জলরাশি। সেই সঙ্গে মৎস্য ভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে বিশাল হাওরজুড়ে। এতে খুশির অন্ত নেই হাওর পাড়ের জেলেদের।
জানা যায়, হাওর অঞ্চলের জেলা হবিগঞ্জের অধিকাংশ মানুষই বর্ষায় মাছ আহরণের সঙ্গে জড়িত থাকেন। কিন্তু অন্যান্য বছর আষাঢ় মাসে হাওরের চারদিকে অথৈই পানিতে থই থই করলেও এ বছর পানিশূন্য ছিল হাওর। ফলে হাওরে দেশি মাছের শঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করে। এতে বিপাকে পড়েন জেলেরা। মানবেতর দিনযাপন করতে হয় হাওর পাড়ের কয়েক লাখ সাধারণ মানুষকে।
কোনো উপায় না পেয়ে অনেকে আবার শহরে এসে বিভিন্ন কাজ শুরু করেন। কিন্তু গত তিনদিনের ভারি বর্ষণ আশীর্বাদ বয়ে আনে সেইসব অসহায় মানুষর জীবনে। বৃষ্টিতে বাড়তে থাকে হাওরের পানি সেই সঙ্গে দেশীয় মাছও। বর্তমানে হাওরে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় মাছ ধরা পড়ছে। ফলে আনন্দের সীমা নেই হাওরের মানুষের মনে।
এ বিষয়ে বানিয়াচং উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের বাসিন্দা সুধন সরকার বলেন, 'হাওরে পানি না থাকায় একদম মাছ পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু তিনদিন ধরে বৃষ্টি দেয়ায় পানি বাড়ছে, সেই সাথে প্রচুর পরিমাণে মাছও পাওয়া যাচ্ছে।'
একই উপজেলার হারুনী গ্রামের প্রেমানন্দ দাস বলেন, 'ভরা বর্ষায়ও হাওরে পানি ছিল না। যার কারণে কোনো মাছ পাওয়া যেত না। তখন আমরা সবাই কুচিয়া ধরতে শুরু করি। কিন্তু এতে আমাদের পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। কিন্তু এখন পানি হওয়ায় প্রচুর পরিমাণে মাছও পাওয়া যাচ্ছে।'
হবিগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহাজাদা খসরু বলেন, 'বৃষ্টি হলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। ফলে উজান থেকে বিভিন্ন মাছ আসতে শুরু করে। এছাড়া বিভিন্ন বিলের মাছও তখন উপরে উঠে আসে। তাই বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা পড়ছে।'
এদিকে, ভারি বর্ষণে নদীপাড়ের মানুষদের আহার নিদ্রাহীন রাত কাটছে। ইতোমধ্যে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, বানিয়াচং ও আহমিরীগঞ্জ উপজেলার ৬০টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে নবীগঞ্জ উপজেলার ৫০টি গ্রাম। কুশিয়ারার বাঁধ ভেঙে পানিতে ভেসে গেছে কয়েক হাজার পরিবারের সর্বস্ব। সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র আর খাবারই এখন তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। নতুন করে আরও কয়েক শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে নির্ঘুম রাত কাটছে এইসব এলাকার মানুষের।
অন্যদিকে, নবীগঞ্জ উপজেলার দিঘলবাগ গ্রামের মালেক মিয়ার বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বর্তমানে তিনি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থা করছেন। তিনি জানান, বন্যার পানিতে তার ঘরে থাকা অনেক কিছু ভেসে গেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে এখন তাকে আশ্রয়কেন্দ্রে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন।
হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম বলেন, 'কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।' পানি আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন হাসান বলেন, 'বন্যার্তদের প্রাথমিকভাবে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। যথেষ্ট পরিমাণে ত্রাণ মজুদ আছে। এছাড়া একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে সার্বক্ষণিক হট লাইন নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারবেন পানিবন্দি লোকজন।'