ভোলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমিতে চাষাবাদ

  • মোকাম্মেল মিশু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ভোলা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বন বিভাগের খালি জমি, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

বন বিভাগের খালি জমি, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

ভোলার বনাঞ্চলে ১৫ হাজার একর জমি রয়েছে, যেখানে কোনো বন নেই। বন বিভাগের দাবি অনুযায়ী, জমিগুলো সংরক্ষিত বনাঞ্চল হলেও, তা মূলত খালি জায়গা। তবে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বন বিভাগকে ম্যানেজ করে এসব জমিতে চাষাবাদ করেন। কিন্তু তারা স্থায়ীভাবে এ জমি বরাদ্দ পাচ্ছেন না।

জানা গেছে, ভোলার চরফ্যাশন-মনপুরাসহ বিভিন্ন উপজেলার নদী এবং সাগর বক্ষে জেগে ওঠা অন্তত অর্ধশতাধিক চরে বনবিভাগ বনায়ন করেছে। কিন্তু কিছু কিছু চরাঞ্চলে সময়মতো বনায়ন না করায় মাটি শক্ত হয়ে গেছে। এখন আর এই মাটিতে কেওড়া-গেওয়াসহ ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের বাগান করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এক প্রকার খালি পড়ে আছে চরাঞ্চলের মাইলের পর মাইল জমি। তবে স্থানীয় লোকজন কয়েক বছর ধরে এসব চরের জমিতে চাষ করে হাজার হাজার মন ধান উৎপাদন করছেন। কেউ কেউ বনাঞ্চলের উৎপাদিত ধান দিয়েই সংসারের বার্ষিক খোরাক মেটাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

ভোলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে চাষাবাদ

চাষিদের দাবি, বনবিভাগ এই জায়গাগুলোকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল বললেও প্রকৃত অর্থে এসব ফাঁকা জায়গাগুলো কৃষি জমি। ভূমিহীন কৃষকরা বছরের পর বছর ধরে চাষাবাদ করছেন। অথচ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অজুহাতে জমিগুলো তাদের মাঝে স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

আবু মুছা নামে এক চাষি জানান, মনপুরায় অনেকগুলো চর আছে যেখানে বাগানের পরিমাণ খুবই কম কিন্তু জমি চাষের উপযোগী। বিশেষ করে ঢালচর, কাজিরচর, চর নজরুল, চর ইসলাম সবগুলোতে কম বেশি চাষ হয়। এবার চর ইসলামে ২৮-৩০ জন লোক চাষ করে ৫০০ মণ ধান পেয়েছেন চাষিরা।

রিয়াজ ফরাজি নামের আরেক চাষি জানান, চরে বসবাসকারীরা আগে তিন বেলা তিন মুঠো ভাতই খেতে পারতেন না। এখন চরের জমিতে চাষ করায় ধান পাচ্ছে।

ভোলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে চাষাবাদ

স্থানীয় বাসিন্দা কাসেম মাস্টার জানান, চরের জমি খালি পড়ে আছে। এসব জমিতে কোনো গাছ নাই। ভূমিহীনরা এখানে চাষ করে খায়। গত বছরও প্রায় পৌনে ২০০ ভূমিহীন এখানে চাষ করেছে। তারা ওই বছর প্রায় সাড়ে চার হাজার মণ ধান পায়। সরকার যদি এই জমিগুলো ভূমিহীনদের মধ্যে বরাদ্দ দেয় তাহলে চরের মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে ভোলা জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ১৪ হাজার ৩০৮ একর। মন্ত্রণালয় এসব জমি জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশনা দিলেও বনবিভাগ তা করেনি।

ভোলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে চাষাবাদ

মনপুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. বশির আহাম্মদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'এসব জমি নিয়ে বন বিভাগের সঙ্গে প্রশাসনের দীর্ঘদিনের বিবাদ রয়েছে। আমরা জমি উদ্ধারে ডিমারগেশনের কাজ শুরু করেছি। জমি উদ্ধার হলে ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হবে।'

উপকূলীয় বন বিভাগ ভোলার কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'পুরাতন জমিতে বনায়ন করা যাচ্ছে না। ওইসব জমি ডি-রিজার্ভ করতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে জেলা প্রশাসকের কাছে এসব জমি হস্তান্তর করা হবে।'