বগুড়ায় বন্যা মোকাবেলায় প্রশাসন চাইছে বাড়তি বরাদ্দ
বন্যা প্রচণ্ড রকমের ঝাঁকুনি দিয়ে গেছে প্রাচীন জনপদ বগুড়ায়। উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাত এ জলায় বন্যা পরিস্থিতিকে করে তোলে ভয়াবহ। গত ১৩ জুলাই থেকে পানি আসতে শুরু করে বগুড়ায়।
বন্যা মোকাবেলায় জেলায় এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ। পাশাপাশি গবাদি পশুর জন্যেও অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চেয়েছে জেলা প্রশাসন।
সোমবার (২১ জুলাই) বিকেলে বগুড়া সার্কিট হাউসে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ কথা বলেন জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহমেদ।
তিনি বলেন, বর্তমানে জিআর খাতে ১৮৪ মেট্রিক টন চাল ও নগদ অর্থ ৫০ হাজার টাকা অবশিষ্ট রয়েছে। এই অর্থ ও ত্রাণ দ্রুত ফুরিয়ে যাবে।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মো. এনামুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামালসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় অংশ নেন।
সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত জেলায় ৭১৭ মেট্রিক টন জিআর চাল, ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ সহায়তা বরাদ্দ করা হয়েছে সাড়ে ১১ লাখ টাকা। প্রয়োজনে আরও ত্রাণ ও অর্থ বরাদ্দ ছাড় করা হবে বলে জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। ভাটি অঞ্চল হিসেবে উজান থেকে আসা বন্যার পানি হয়ত ঠেকানো যাবে না কিন্তু আমাদের লক্ষ্য থাকবে বন্যায় কী করে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়।
তিনি বলেন, আমরা এই জেলার জন্য ৫০০ পিস তাঁবু পাঠিয়েছি যাতে করে খোলা আকাশের নিচে কাউকে থাকতে না হয়। প্রয়োজনে আরো শুকনো খাবার ও তাঁবু পাঠানো হবে।
সভায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, বগুড়ার বাঙালি, নাগর ও যমুনা নদীর ভাঙন রোধ করতে সরকার বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে এ জেলায় বন্যার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে।
বাঙালি ও যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্লাবিত হয়েছে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের ১৭৯টি গ্রাম।
নদী ভাঙনের ছোবলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ২০৫টি ঘরবাড়ি। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ৯৫০টি ঘরবাড়ি।
৩৬৯২ জন বানভাসি মানুষ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়ার পাশাপাশি বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে ১১ হাজার ৬০০ জন বন্যা দুর্গত।
জেলা প্রশাসনের তরফে বন্যা মোকাবেলায় অতিরিক্ত চাহিদা হিসেবে জিআর ৩০০ মেট্রিক টন চাল, নগদ অর্থ হিসেবে ২০ লাখ টাকা, শুকনো খাবার আরও পাঁচ হাজার প্যাকেট, ৪ হাজার পিস তাঁবু, ভারী পলিথিন ৮ হাজার পিস, গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ৮০ মেট্রিক টন পশুখাদ্য কিংবা সমপরিমাণ অর্থ, শিশু খাদ্য এবং আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহের জন্য বাড়তি অর্থ বরাদ্দের চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে।