বগুড়ায় বন্যায় পাট চাষিদের সর্বনাশ
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক ফজলুল করিম এবার ৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং পোকার আক্রমণ না হওয়ায় ভালো ফলনের আশা করেছিলেন।
কিন্তু বাঙ্গালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্টি হওয়া বন্যায় এক সপ্তাহের মধ্যে তার আশা নিরাশায় পরিণত হয়েছে। ৫ বিঘা জমির পাট পানির নিচে। দেরিতে বীজ বপন করার কারণে আরও ১৫ দিন পর পাট গাছ কাটার সময় হতো। লাভ তো দূরের কথা, এখন পাট চাষ করে ফজুলল করিমকে বিঘা প্রতি ৫-৬ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
জোরগাছা গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম চৈত্র মাসের শুরুতেই ৫০ শতাংশ জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। বন্যার পানি জমিতে ঢোকার আগেই পাট কেটে জাগ দিয়েছিলেন তিনি।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) পাট থেকে আঁশ ছাড়িয়েছেন তিনি। বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে তিনি জানান, বন্যা না হলে এই অঞ্চলের চাষিরা এবার পাট বিক্রি করে ভালো লাভ করতে পারতেন। কিন্তু বন্যার কারণে পাট চাষিরা সর্বশান্ত।
তিনি আরও জানান, ৫০ শতাংশ জমিতে পাট চাষ করতে তার খরচ হয়েছে ১১ হাজার টাকা। বন্যার পানি আসার আগেই পাট কাটতে পারায় খুব বেশি ক্ষতি হয়নি তার। তারপরেও তার ৫ শতাংশ জমির পাট বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে। ৫ শতাংশ জমির পাট নষ্ট হওয়ার পরেও ১২ মণ পাট ঘরে তুলবেন বলে আশা করছেন তিনি।
গাবতলী উপজেলার মহিষাবান গ্রামের পাট চাষি পিন্টু জানান, গত বছরের তুলনায় এবার পাটের বাজার ভালো। এখন বাজারে পাটের মণ ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা। গত বছর এই সময় পাটের বাজার ছিল ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা।
বগুড়া জেলার ১২ উপজেলার মধ্যে শিবগঞ্জ, সোনাতলা, গাবতলী, সারিয়াকান্দি, শেরপুর ও ধুনট উপজেলায় পাট চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। এবারের বন্যায় সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার যমুনার চরাঞ্চলের ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির পাট ডুবে নষ্ট হয়েছে আরও দুই সপ্তাহ আগে।
যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করলে পশ্চিমপাড়ে বাঙ্গালী নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। এর ফলে সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, গাবতলী, শাজাহানপুর, শেরপুর ও ধুনট উপজেলার বাঙ্গালী নদীর দুই পাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি প্রবেশ করে। এতে করে আরও ১০ হাজার হেক্টর জমির পাটসহ সব ধরনের ফসল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে যমুনার পানি কমে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাঙ্গালী নদীর পানি গত এক সপ্তাহে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।