পাহাড়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ‘ড্রাগন’ চাষ

  • আলাউদ্দিন শাহরিয়ার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বান্দরবান, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পাহাড়ে ড্রাগন চাষ/ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

পাহাড়ে ড্রাগন চাষ/ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হওয়ায় বান্দরবানে জনপ্রিয় হচ্ছে বিদেশি ফল ‘ড্রাগন’ চাষ। ড্রাগন চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন ম্রো জনগোষ্ঠীর চাষি তোয়ো ম্রো। চিম্বুক পাহাড়ের বসন্ত পাড়ায় তিন একর পাহাড়ি জমিতে ভিন্ন পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ করেছেন তিনি। এই ফল চাষে কংক্রিটের পিলারের পরিবর্তে মেহগনি গাছের গুড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। ৪৬০টি গাছের উপরের অংশ কেটে গুড়িতে এক হাজার ৫৩০টি ড্রাগনের চারা লাগিয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, আঠারো মাসের ব্যবধানে দুটি মৌসুমে বাগানের ড্রাগন ফল বিক্রি করে তোয়ে ম্রো আয় করেছেন নয় লাখ টাকা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তার বাগানে উৎপাদিত ড্রাগন ফল ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/28/1564335489099.jpg

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, স্বল্প সময়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় বান্দরবানে জুম চাষ ত্যাগ করে বিদেশি ফল ড্রাগনের চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন পাহাড়ি চাষিরা। জেলার চিম্বুক-নীলগিরি সড়কের বসন্তপাড়ায় প্রায় ২০ একর পাহাড়ের উচু-নিচু ঢালু জমিতে মিশ্র ফলের বাগান রয়েছে। এরমধ্যে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দেড় একর পাহাড়ি জমিতে ৭৫টি পাঁকা পিলারের খুঁটিতে ৩০০ ড্রাগন চারা লাগিয়ে সফলতা পান তোয়ে ম্রো। ছয়মাস পর বাগানে উৎপাদিত ড্রাগন বিক্রি করে আয় করেন এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। পরে ২০১৭ সালে বাগানের পাশে তিন একর জমির মেহগনি গাছের উপরের অংশ কেটে সেখানে এক হাজার ৫৩০টি ড্রাগন চারা লাগান। এছাড়া ৫০টি পিলারের গোড়ায় ৩৩০টি ড্রাগন ফলের গাছের চারা রোপন করেন।

বিজ্ঞাপন

তোয়ো ম্রো বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘বাগানে দুই হাজার ড্রাগন গাছে ফল এসেছে। ইতোমধ্যে চার লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেছি। বাগানে আরও অনেক ফল রয়েছে। ছয় মাস পর ১৮-২১ দিন পরপর ফল সংগ্রহ করা যায়। বাগানে লাল, সাদা, গোলাপী ও গোলাপী রঙের ড্রাগন উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতি কেজি ড্রাগন বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এক সময় এলাকার মানুষ ড্রাগন ফল চিনতো না, ধারণাও ছিল না। তবে এখন ড্রাগনের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। আগামীতে এ ফলের চাহিদা আরও বাড়বে।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/28/1564335509736.jpg

বসন্তপাড়ার চাষি রেংরাং ম্রো জানান, চাষি তোয়ো ম্রো পিছিয়ে পড়া ম্রো জনগোষ্ঠীর উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতির পথ প্রদর্শক। তার অনুপ্রেরণায় এই অঞ্চলের জুম চাষিরা বর্তমানে ড্রাগনসহ বিভিন্ন ধরণের মিশ্র ফল চাষ করছেন। অলাভজনক জুমচাষ ছেড়ে দিচ্ছেন ম্রো চাষিরা। তোয়োর বাগান থেকে ড্রাগনের চারা সংগ্রহ করে বসন্তপাড়াসহ আশপাশের পাহাড়ি গ্রামগুলোতে অনেকে ড্রাগন ফল চাষ শুরু করেছেন।

কৃষিবিদদের মতে, ড্রাগন একধরনের ক্যাকটাস গাছের ফল। এ ফলের অন্য-নাম পিটাইয়া। চীনে এই ফলের নাম হুয়ো লং গুয়ো, ভিয়েতনামে থানহ লং। ড্রাগন ফলের জন্ম মধ্য আমেরিকায়। দক্ষিণ এশিয়ার মালয়েশিয়ায় ফলটি প্রবর্তিত হয় বিংশ শতাব্দীর দিকে। বর্তমানে ভিয়েতনামে ফলটি বেশি চাষ হচ্ছে। ভিয়েতনাম ছাড়াও তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, চীন, ইসরাইল, অস্ট্রেলিয়াতেও চাষ হচ্ছে। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম ড্রাগন ফলের গাছ নিয়ে আসা হয়।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক একেএম নাজমুল হক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘বান্দরবানে ড্রাগনের চাষ বেশ সাড়া ফেলেছে। পাহাড়ে ড্রাগন ফল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। পোকা মাকড়ের আক্রমন কম এবং পানির সেচ কম লাগায় ড্রাগন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন পাহাড়িরা। বিদেশি ফল হলেও পার্বত্য অঞ্চলের জলবায়ু এবং মাটি দুটোই ড্রাগন ফল চাষের জন্য উপযোগী। কম পরিশ্রমে ছোট্ট জায়গার মধ্যেও ড্রাগন ফলের চাষ করা সম্ভব। শখের বসে অনেকে বাড়ির ছাদে এবং সরকাবি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিসের আশপাশে ড্রাগনের চারা রোপণ করা হয়েছে।