শারীরিক অক্ষমতাকে জয় করতে চায় রাজীব
ছয় বছর বয়সে গাছ থেকে পড়ে বাম হাত ভেঙে যায় রাজীবের। পরিবারের অর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয় রাজীব। স্থানীয় খনকার-কবিরাজই ছিল রাজীবের পরিবারের একমাত্র ভরসা। কিন্তু তাতে আর কাজ হয়নি।
পরে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে বাম হাতে পচঁন ধরার কারণে ডাক্তার অর্ধেক হাত কেটে ফেলেন। তারপর থেকে কাটা বাম হাত নিয়ে চলতে হচ্ছে রাজীবকে। হাত না থাকলেও দমে যাওয়ার পাত্র নয় রাজীব। শারীরিক অক্ষমতাকে জয় করে এগিয়ে যেতে চায় সামনের দিকে।
সম্প্রতি ভোলায় প্রতিবন্ধীদের জন্য দুইদিন ব্যাপী স্পেশাল অলিম্পিকের বাছই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কোস্ট ট্রাস্ট আইইসিএম প্রকল্পের টগর কিশোর ক্লাব পক্ষে অংশ নিতে এসে তার স্বপ্নের কথা জানায় রাজীব। তার বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নে।
কৃষক বাবা মো: হোসেন ও মা গৃহিণী হোসনে আরার তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট রাজীব। বর্তমানে সে উত্তর ফ্যাশন আর্দশ দাখিল মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে। রাজীবের হাত না থাকায় বাবা-মায়ের কাছে কিছুটা খারাপ লাগলেও তার সফলতায় অনেক খুশি তারা।
মা হোসনে আরা ছেলেকে চরফ্যাশন থেকে নিয়ে এসেছেন ভোলায় খেলাধুলায় অংশ গ্রহণ করাতে। এখানে অংশ নিতে পেরে ছেলে অনেক খুশি। বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি নাচ, গানেও আনন্দ দিয়েছে সবাইকে। তার ছেলে একদিন জাতীয় পর্যায়েও সুযোগ পাবে- এমন প্রত্যাশা রাজীবের মায়ের।
রাজীব জানায়, খেলাধুলায় অংশ নিতে পেরে তার খুব ভালো লাগছে। সে প্রতিবন্ধী শিশুদের খেলাধুলায় জাতীয়ভাবে অংশ নিতে চায়। ক্রিকেট, ফুটবল, দৌড়, ভলিবল, ব্যাডমিন্টনসহ নানা ধরনের খেলাধুলায় পারদর্শী রাজীব। এমনকি গান ও নাচও করতে ভালো লাগে বলে জানায় সে।
একদিকে পরিবারের দরিদ্রতা, অন্যদিকে তার শারীরিক অক্ষমতা। এক পর্যায়ে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। পরে ইউনিসেফের সহযোগিতায় ও কোস্ট ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার টাকার ‘শিশু সুরক্ষা বৃত্তি’ পায়। তা দিয়ে ছাগল কিনে পালন করে আয় করা অর্থ দিয়ে পড়াশোনারা খরচ চালিয়ে যাচ্ছে সে।
রাজীবের মা হোসনে আরা বলেন, ‘প্রতিবন্ধী হলেও রাজীবের পড়াশোনায় আগ্রহের কারণে তাকে স্কুলে ভর্তি করে দিই। সংসারে অভাবের কারণে আমদের পক্ষে ওর পড়াশোনার খরচ চালানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।‘
কোস্ট ট্রাস্ট আইইসিএম প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প সমন্বয়কারী দেবাশীষ মজুমদার বলেন, ‘রাজীবের মতো ভোলার তিনটি উপজেলা প্রান্তিক ও অবহেলিত, বিদ্যালয় হতে ঝড়ে পড়া, এতিম, আশ্রিত, বিশেষ গুণসম্পন্ন প্রতিবন্ধী ও শিশু বিবাহের ঝুঁকিতে থাকা এমন ৫০৮ জন কিশোর-কিশোরীর মাঝে এককালীন ১৫ হাজার টাকা ‘শিশু সুরক্ষা বৃত্তি’ প্রদান করেছি। যার মধ্যে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু হচ্ছে প্রায় ১০০ জন।’