৪৫ কিলোমিটার সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ ৫৪ বেইলী ব্রিজ

  • আলাউদ্দিন শাহরিয়ার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম,বান্দরবান
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বেইলী ব্রিজে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে চলছে যাত্রীরা (রুমা সড়ক), ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

বেইলী ব্রিজে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে চলছে যাত্রীরা (রুমা সড়ক), ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় ৪৫ কিলোমিটার সড়কে ৬২টি ব্রিজের মধ্যে ৫৪টি বেইলী ব্রিজই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ৩৯ বছর আগে ১৯৮০ সালে তৈরি করা ৫৪টি বেইলী ব্রিজ দিয়ে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিনই চলাচল করছে অসংখ্য যাত্রীবাহী যানবাহন। তার মধ্যে পর্যটকবাহী যানবাহনের সংখ্যা বেশি। এতে করে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলোতে প্রায় সময় ঘটছে দুর্ঘটনা।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোর সূত্র জানায়, বান্দরবান জেলা সদর থেকে রুমা উপজেলার দূরত্ব ৪৫ কিলোমিটার। বর্ষায় পাহাড় ধস এবং ভেঙে যাওয়ার ফলে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সড়কগুলো। সড়কের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে ছোটবড় খানাখন্দ আর অসংখ্য গর্ত। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটি কোনো রকম মেরামত করে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রেখেছে ইঞ্জিনিয়ার কোর এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ বেইলী ব্রিজগুলো দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান স্থানীয়রা। প্রতিবছর বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটি সংস্কারের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চিম্বুক ওয়াইজংশন তিনরাস্তা মোড় থেকে রুমা পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার সড়কের সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ৪ কোটি টাকা। আর জেলা সদর থেকে চিম্বুক পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ৩ কোটি টাকা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/07/1565161711987.jpg
মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিনই চলাচল করছে অসংখ্য যাত্রীবাহী যানবাহন

 

বিজ্ঞাপন

এবছর বর্ষায় শুধুমাত্র ওয়াইজংশন থেকে রুমা পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার সড়কে ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি টাকা। প্রকৌশল বিভাগ এবং কন্সট্রাকশন কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বান্দরবানের রুমা উপজেলা সড়কটি সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং বিপদজনক একটি সড়ক। চলতি বছর এখনও পর্যন্ত সড়কটির সংস্কারে কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়।

রুমা উপজেলার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সেলিম ও শৈহ্লা মং মারমা অভিযোগ করে বলেন, বর্ষায় সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ১১ দিন যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ ছিল। ঝুঁকিপূর্ণ বেইলী ব্রিজগুলো যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে চলাচল করছে স্থানীয়রা। দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ বেইলী ব্রিজগুলোর স্থলে পাকা আরসিসি ব্রিজ তৈরির দাবি জানান তারা।

পরিবহণ শ্রমিক নূর হোসেন ও মোহাম্মদ কামাল বলেন, ভাঙাচোরা রুমা-চিম্বুক সড়কে গাড়ি চালানো খুবই কষ্টকর। সড়কটি এতটাই ভাঙা যে প্রতিদিনই গাড়ির কোনো না কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। যাত্রীদের ভোগান্তিও বেড়েছে। সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় ঝাঁকানিতে অসুস্থ হয়ে পড়ছে যাত্রীরা।

রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা জানান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শেখরে রয়েছে রুমা উপজেলা। কিন্তু পাহাড়ের আঁকাবাঁকা ৪৫ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বিপদজনক হয়ে পড়েছে। রুমা উপজেলার দৃষ্টিনন্দন টুরিস্ট স্পট বগালেক, রিজুক ঝর্ণা, ক্যাওক্রাডং, জাদিপাই ঝর্না দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণে আসা পর্যটকরাও চরম দুর্ভোগ পড়ছে। ব্রিজের বেহাল দশার কারণে রুমা উপজেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে।  

জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সজিব আহমেদ জানান, রুমা-চিম্বুক সড়কের জন্য নতুন কোনো বরাদ্দ আসেনি। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোর সড়কটির তত্ত্বাবধায়নের দায়িত্বে রয়েছে। সড়কটি সংস্কারের জন্য কতটাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে সেটি আমার জানা নেই। তবে দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হলেও সড়কের মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বেইলী ব্রিজগুলো জরুরি ফান্ড থেকে সংস্কার করা হচ্ছে।

সেনাবাহিনীর ২০ ইসিবি ইঞ্জিনিয়ার কোর এর কর্মকর্তা লে: কর্নেল রোমিও জানান, বান্দরবান জেলা সদর থেকে চিম্বুক এবং ওয়াইজংশন থেকে রুমা পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বেইলী ব্রিজগুলো বাতিল করে আরসিসি ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। মন্ত্রণালয়ে বাজেট প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়েছে। সড়কটি মেরামতের কাজ করছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার শাখা। বাজেট পাওয়ার পর দ্রুত বিপদজনক ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলোর স্থানে পাকা ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।