৪৮ বছরেও মেলেনি স্বীকৃতি, ভিক্ষা করেন মুক্তিযোদ্ধা

  • গিয়াস উদ্দিন রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, নোয়াখালী, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভিক্ষা করছেন মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

ভিক্ষা করছেন মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

নোয়াখালীর সেনবাগের কাদরা ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের শামসুল হক গত ৪৮ বছরেও পাননি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও অস্ত্র জমাদানের সার্টিফিকেট থাকার পরও স্বীকৃতি পাননি তিনি। আর এ জন্য সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধাও পান না শামসুল হক। ফলে শেষ বয়সে সংসার চালাতে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিতে হয়েছে।

জানা গেছে, সাবেক উপজেলা কমান্ডার আবদুল ওহাবকে একাধিকবার টাকা দেওয়া হলেও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম ওঠেনি। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকা ছেড়েছেন শামসুল হক। এখন তার শেষ ইচ্ছা, দেশের মাটিতে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়েই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা।

বিজ্ঞাপন

আরও জানা গেছে, নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার জামালপুরের বাসিন্দা শামসুল হক। ১৯৭১ সালে বয়সে তিনি তরুণ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশকে শত্রুমুক্ত করতে অন্যদের সঙ্গে তিনিও ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন। পরে নিজ এলাকা সেনবাগ ও পার্শ্ববর্তী সোনাইমুড়ি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন।

কিন্তু স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি শামসুল হক। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও অস্ত্র জমাদানের সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে বিভিন্ন দফতরে বারবার ধর্না দিয়েছেন। পরে চাপা ক্ষোভ ও লজ্জা নিয়ে এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রামে গিয়ে ভিক্ষা করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগ আছে, নাম তালিকাভুক্তির জন্য ২০১৭ সালে সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও তার সহযোগীর হাতে ভিক্ষার ৩০ হাজার টাকা তুলে দেন শামসুল হক। সেনবাগ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পাচ্ছেন ৮২৭ জন। আরও ১৯৭ জনকে ভাতা দেওয়ার জন্য তালিকা পাঠানো হয়েছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে। কিন্তু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ভুয়াদের তালিকাভুক্ত করেছেন সাবেক উপজেলা কমান্ডার।

এদিকে, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাবেক কমান্ডার আবদুল ওহাব টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'শামসুল হকের নাম তালিকাভুক্ত না হওয়ায় আমিও মর্মাহত হয়েছি।'

এ বিষয়ে সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান ফোনে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হকের নাম লাল মুক্তিবার্তা ও ভারতীয় তালিকায় নেই। তবে যাচাই বাচাই করে ৬-৭ মাসের মধ্যে এ বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে জানা মাত্র আমি তাৎক্ষণিক ওই মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সহায়তা করেছি। ভবিষ্যতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শামসুল হককে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'সেনবাগ উপজেলার সাবেক কমান্ডার আবদুল ওহাব ২০১৭ সালে শামসুল হকের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। সাবেক ওই কমান্ডার কিছুদিন আগে দুদকের মামলার জেল থেকে জামিনে বের হয়েছেন বলে শুনেছি।'