শিশু ধর্ষণের অভিযোগে মসজিদের ইমাম রিমান্ডে
নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার ফতুল্লার চাঁদমারিতে মসজিদের ভেতর আট বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত মসজিদের ইমামকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলম এই আদেশ দেন।
এর আগে, গত ৭ আগস্ট ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর অপহরণ চেষ্টার অভিযোগে ইমাম ফজলুর রহমান ওরফে রফিকুল ইসলাম (৪৫)সহ ছয় জনকে আটক করে র্যাব। সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আসামিদের আদালতে প্রেরণ করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ।
শুনানি শেষে আদালত ফজলুর রহমানকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর ও অপর পাঁচ আসামিকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।
রিমান্ডকৃত ইমাম রফিকুল ইসলাম নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া সরাপাড়া এলাকার মৃত রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ফতুল্লার চাঁদমারি এলাকার বায়তুল হাফেজ মসজিদে ইমামতি করতেন। মামলার অপর আসামিরা হচ্ছেন- রমজান আলী, গিয়াস উদ্দিন, হাবিব এ এলাহী হবি, মোতাহার হোসেন ও শরিফ হোসেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার শিশুটি রাতের বেলায় বিভিন্ন প্রকার দুঃস্বপ্ন দেখে কান্নাকাটি করত। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরেও ভালো না হওয়ায় স্থানীয় বায়তুল হাফেজ মসজিদের ফজলুর রহমানের কাছে ঝাড়ফুঁক ও পানিপড়া নিতে আসে। দুই থেকে তিন বার ঝাড়ফুঁক ও পানিপড়া নেবার পরেও অবস্থার উন্নতি না দেখে ২ আগসট ভিকটিমের বাবাকে মেয়ের চিকিৎসার জন্য ফজরের আযানের সাথে সাথে মসজিদে আসতে বলেন ইমাম।
কথা অনুযায়ী ঐদিন ভোরে শিশুটির বাবা তাকে নিয়ে মসজিদে যান। ফজরের নামাজের পর শিশু ও তার বাবাকে নিয়ে মসজিদের ৩য় তলায় ইমামের রুমে নিয়ে যায়। এরপর পরিকল্পিতভাবে ভিকটিমের বাবাকে আগরবাতি-মোমবাতি কিনে আনার কথা বলে তাকে বাহিরে পাঠিয়ে দেন। সেই সুযোগে শিশুটিকে নির্মমভাবে পাশবিক নির্যাতন করে এবং তার গলায় ছুরি ধরে তাকেসহ তার বাবা-মাকে হত্যার ভয় দেখায়।
এক পর্যায়ে শিশুটি অসুস্থ হয়ে গেলে ইমাম শিশুটির বাবাকে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করে বিদায় করে দেন। বাড়ি ফিরে শিশুটি তার বাবা মাকে সবকিছু খুলে বললে ভুক্তভোগী পরিবার মসজিদ কমিটির নিকট বিচার দেন। তবে মসজিদ কমিটি উল্টো ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে শিশু ও তার বাবা মাকে হেনস্থা করে এবং পরিবারটিকে থানা ও হাসপাতালে না যেতে হুঁশিয়ার করে দেয়।
তবে শিশুটির বাবা গোপনে তাকে নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ খবর জানতে পেরে ধর্ষক ফজলুর রহমান ও তার অনুসারীরা শিশুটিকে হত্যা ও অপহরণ করার উদ্দেশে হাসপাতালে কয়েক দফায় হামলা চালায়। অপহরণ থেকে বাঁচতে শিশুটিকে হাসপাতালে লুকিয়ে রাখে শিশুটির বাবা। একপর্যায়ে হাসপাতালের নার্সের বোরকা পড়ে র্যাব অফিসে এসে অভিযোগ দায়ের করেন শিশুটির বাবা।
ঘটনা জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে র্যাব-১১ এর একটি টিম ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে ছুটে যায়। ভিকটিম ও তার পরিবারের সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পেয়ে হাসপাতালে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। পরবর্তীতে ৭ আগস্ট ফতুল্লার বিভিন্ন স্থান থেকে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়। র্যাব জানায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে।