সারারাত নদীতে ভেসে থাকার পর যেভাবে উদ্ধার হয় বিথী
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনার চর থেকে জীবিত উদ্ধার করা শিশু মমতা আক্তার বিথী (৭) এখন অনেকটা সুস্থ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিথীর পাশে রয়েছেন তার চাচা আব্দুল আউয়াল ও দাদা নজরুল ইসলাম। এছাড়া সঙ্গে রয়েছেন বিথীকে উদ্ধারকারী সেই পারভীন বেগম। তিনি নিজের সন্তানের মতো করে বিথীর সেবা করে যাচ্ছেন। পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বিথীর পাশে থাকবেন বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় সারিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমের সঙ্গে কথা হয় পারভীন বেগমের। তিনি সারিয়াকান্দি উপজেলার ঘুঘুমারি শেখ পাড়া গ্রামের আব্দুল খালেকের স্ত্রী।
পারভীন বেগম জানান, বৃহস্পতিবার সকালে তিনি তার স্বামী, ভাশুর জালাল, জা আমিনর নেছা যমুনা নদীতে ভেসে আসা খড়ি ধরতে যান। সবাই নদীর পানিতে নেমে ভেসে আসা বিভিন্ন ডালপালা ধরার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এক সময় পারভীনের চোখে পড়ে বালু চরের মধ্যে একটি শিশু আটকা পড়ে আছে। প্রথমে লাশ ভেবে উদ্ধার করে নদীর পাড়ে টেনে তুলেন। তবে নদীর পাড়ে তোলার পরে বুঝতে পারেন বাচ্চাটি জীবিত। তার চোখ মুখ এবং নাক বালু দিয়ে বন্ধ। এরপর সঙ্গে সঙ্গে তাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পরিষ্কার করেন এবং সারিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
সেখানে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয় শিশুটিকে। দুপুরের দিকে শিশুটির জ্ঞান ফিরলে নিজের নাম এবং বাড়ির ঠিকানা বলার পর আবারো জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বিকেলের দিকে তার আবার জ্ঞান ফিরে।
নাম ঠিকানা পাওয়ার পর থানা পুলিশ এবং স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতায় তার স্বজনদের কাছে সংবাদ পাঠানো হয়। বিকেলে শিশুটির চাচা আব্দুল আউয়াল ও দাদা নজরুল ইসলাম সারিয়াকান্দি চলে আসেন।
বিথীর চাচা আব্দুল আউয়াল বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, তাদের বাড়ি জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ থানার চর হলকা হাওড়া বাড়িতে। বিথীর বাবা মঈন উদ্দিন ময়মনসিংহে একটি ফিড মিলে কাজ করেন। বুধবার (৭ আগস্ট) বিথী তার বড় ভাই নুরুল ইসলাম (৯) ও মা ফিরোজা বেগমের সঙ্গে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ত্রাণ নিয়ে নৌকা যোগে বাড়ি ফিরছিল। নৌকায় নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ২৯ জন যাত্রী ছিল। নৌকাটি মাঝ নদীতে ডুবে যায়। বিথীসহ তার মা-ভাই নিখোঁজ হয়। সারারাত খোঁজ করে বৃহস্পতিবার সকালে ৬০ কিলোমিটার ভাটিতে চরের মধ্যে ফিরোজা এবং নুরুল ইসলামকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বিথীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
বিথীর বাবা মঈন উদ্দিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, তিনি সংবাদ পেয়ে ময়মনসিংহ থেকে রওনা দিয়ে গাইবান্ধা হয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়ি ফিরেছেন। মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন মোবাইল ফোনে।
তিনি আরও জানান, তার স্ত্রী ও দুই সন্তান বেঁচে থাকার কথা না। কিন্তু ভাগ্যক্রমে জীবিত আছেন তিনজনই।
সারিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. রেজাউন নাহার উর্মি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, শিশুটির অবস্থা উন্নতির দিকে। শুক্রবার তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, বুধবার (৭ আগস্ট) রাতে জামালপুরের চর হাওড়াবাড়ী এলাকায় যমুনা নদীতে ২৯ জন যাত্রী নিয়ে নৌকাডুবিতে ৫ জন নিখোঁজ ছিল। বৃহস্পতিবার বিথী ও তার মা-ভাইকে জীবত উদ্ধার করা হয়। এখনো নিখোঁজ রয়েছে আরও ২ জন।
আরও পড়ুন:নৌকাডুবি, সারারাত নদীতে ভেসে থাকা শিশু জীবিত উদ্ধার