হারিয়ে গেছে নদী, বদলেছে পাটনিদের পেশা

  • রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাড়ির উঠানে গৃহস্থালির জিনিস বানাচ্ছেন পাটনিরা, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

বাড়ির উঠানে গৃহস্থালির জিনিস বানাচ্ছেন পাটনিরা, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

নদী তীরে ছিল তাদের বসবাস। নদী ছিল তাদের জীবন ধারণের উৎস। নদীর বুকে নৌকা চালিয়ে চলত তাদের জীবন-জীবিকা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে গেছে নদী। বদলে গেছে তাদের পেশা।

বলা হচ্ছে, ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পাটনি সম্প্রদায়ের কথা। যে পাটনিদের রক্তের বিনিময়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার নামকরণ হয়েছে, সেই পাটনি সম্প্রদায়ের মানুষগুলোই এখন নানা বৈষম্যের শিকার। নদী ও নৌকার পরিবর্তে এখন পাটনিরা বাঁশের বেত বুনে গৃহস্থালির বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

বিজ্ঞাপন

ব্রিটিশ শাসনামলে ময়মনসিংহের পিতলগঞ্জে কাঁচামাটিয়া নদীতে নৌকা চালাতেন ঈশ্বরপাটনি নামে এক মাঝি। ওই সময় পিতলগঞ্জ ঘাটে ইংরেজরা কুঠি স্থাপন করে মানুষজনকে অত্যাচার করে নীল চাষ করাতে বাধ্য করত। একদিন ঈশ্বরপাটনি নৌকার বৈঠা নিয়ে ইংরেজ নীলকরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে পিতলগঞ্জের হাটের নাম পাল্টে মাঝি ঈশ্বরপাটনির নামানুসারে ঈশ্বরগঞ্জ এলাকাটির নামকরণ হয়।

সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের শিমরাইল মহল্লায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী পাটনি সম্প্রদায়ের ৩০টি পরিবার রয়েছে। যে স্থানটিকে ঘিরে পাটনিদের জনপদ গড়ে উঠেছিল তার পাশ দিয়েই প্রবহমান ছিল কটিয়াপুড়ী থেকে কাঁচামাটিয়া পর্যন্ত মাইজাগা নদী। বর্তমানে কাঁচামাটিয়া নদীর অস্তিত্ব থাকলেও মাইজাগা নদীর কোনো অস্তিত্ব নেই।

বিজ্ঞাপন

পাটনিপাড়া ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে দলবদ্ধ হয়ে নারী ও পুরুষরা বেত বুনছেন। হাতের নিপুণ কৌশলে বেত বুনে তারা কুলা, খুরি, ঢাকি, পাখা, চালুন সহ নানা ধরনের গৃহস্থালি উপকরণ তৈরি করছেন। হাটবাজারের দিন এগুলো বিক্রি করা হবে। পাটনিদের তৈরি কুলার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তবে বাঁশ বেতের ব্যবহার ক্রমশ কমে আসায় ঝুঁকির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।

চাঁন মোহন পাটনি বলেন, 'এনজিও ঋণ ও দাদনের টাকা দিয়ে বেত বুনে বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করি। এতে করে লাভের টাকা তাদের হাতে চলে যায়। আমরা যদি সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ পেতাম তাহলে আমরা লাভবান হতে পারতাম।'

পাটনিপাড়ার একাধিক বাসিন্দা জানান, কয়েক কাঠা জমিতে ঘনবসতি করে পাটনিরা অভাব-অনটনে জীবনযাপন করছেন। পূজা-অর্চনার জন্য মন্দির নির্মাণের চেষ্টা করলেও অর্থাভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারছেন না। ভোটের সময় অনেকে পাটনিদের মন্দির ও জীবন মান উন্নয়নে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরবর্তীকে কেউ তাদের খোঁজ নেয় না।

পাটনিপাড়ার সবচেয়ে বৃদ্ধ নব্বইঊর্ধ্ব প্রকাশ চন্দ্র পাটনি বলেন, 'ছোট বেলায় বাবাকে নদীতে চালাতে দেখেছি। কিন্তু আজ নদী নেই, তাই আমাদের পেশাও পাল্টে গেছে। মানবেতর জীবনযাপন করলেও কেউ খোঁজ নেয় না। অর্থসংকটে মন্দির হচ্ছে না, শ্মশানের জায়গাও বেহাত হতে চলেছে। সরকারের লোকজনের এদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।'