ঐতিহ্য হারাতে বসেছে নাচোলের ইলামিত্র গণপাঠাগারটি
ইতিহাস-ঐতিহ্যের লালিত আবাস বলে পরিচিত নাচোল উপজেলা। সাঁওতাল বিদ্রোহের অন্যতম নেত্রী ও দেশ মাতৃকার টানে ব্রিটিশ সামাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বিপ্লবী এক উদাহরণ ইলা মিত্র। প্রবাহমান স্রোতের বিপরীতে গিয়ে তৎকালীন নারী ও দরিদ্র অসহায় কৃষকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী অন্যতম মহিয়সী নারী নাচোলের রানী খ্যাত ইলা মিত্র।
এই বীর নেত্রীর বীরত্বগাঁথা ইতিহাস রক্ষার্থে বিগত সরকারগুলো তেমন উদ্যোগ না নিলেও বর্তমান সরকার কিছুটা আন্তরিক। এই কীর্তিমান নারীর স্মৃতি রক্ষার্থে সাম্প্রতিক সময়ে ইলামিত্র গেট, সাদামাটা স্মৃতিফলক ও জীর্ণশীর্ণ ইলামিত্র স্মৃতি গণপাঠাগার নির্মিত হয়।
ইলামিত্র দেশ ও দেশের বাইরের মানুষের কাছে এই ইতিহাস বেশ প্রসিদ্ধ হলেও নিজ এলাকা তথা নাচোলে এসব ছাড়া তেমন কোন সৃষ্টকর্ম চোখে পড়েনা। ইলামিত্রের স্মৃতি রক্ষার্থে ও যুব সমাজকে মাদকের ভয়ানক থাবা থেকে রক্ষা করে সৃজনশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে ২০১২ সালে নির্মাণ করা হয় নাচোল ইলামিত্র স্মৃতি গণপাঠাগার ও সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র নামক একটি পাঠাগার।
পাঠাগারটি বর্তমানে হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য। পাঠাগার পরিচালনা কমিটির অব্যস্থাপনা ও উদাসীনাতাকে দায়ী করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় শিক্ষক ও সাংস্কৃতি কর্মী আক্তার হোসেন জানান, পাঠাগারটি পরিচলনার জন্য একটি কমিটি করা হয়। সে কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর কিছুদিন নিয়মিত খোলা হত। সে সময় স্থানীয় যুবকসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ ইলামিত্রের জীবনীসহ, গল্প, কবিতার বই ও পেপার পত্রিকার পড়ে জ্ঞান অর্জন করত। এমন কি দেশের বিভিন্নস্থান হতে আগত দর্শনার্থীরা এখানে এসে ইলা মিত্রের জীবনী সম্পর্কে জানতে পারত। তবে অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হয়ে গেছে বই-পুস্তুক ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। পাঠাগারটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে এখানকার সাংস্কৃতিক ব্যবস্থাপনা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, ২০১২ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সাংসদ জিয়াউর রহমান জেলা পরিষদের অর্থায়নে নাচোল গোডাউন পাড়ায় দ্বিতল ভবনসহ ইলামিত্র স্মৃতি গণপাঠাগারটি নির্মাণ করে দেন। সে সময় পাঠাগারটি পরিচালনা করার জন্য সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেন তালন্দ ললিতমোহন কলেজের ভূগোলের প্রভাষক তৌহিদুল ইসলাম শাহিনকে। সে সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ কর্তৃক পাঠাগারে বই-পুস্তকসহ বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র সরবরাহ করলেও বর্তমানে তা চোখে পড়ে না।
এলাকাবাসীর দাবি-কমিটিতে সাংস্কৃতিমনা ব্যক্তিদের রাখা হলে বাঁচানো যাবে পাঠাগারটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাচোল গণপাঠাগারের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম শাহিন পাঠাগারের অব্যবস্থাপনার কথা স্বীকার করে বলেন, পাঠাগারের নামে বিদ্যুৎ মিটার সংযোগের জন্য আবেদন করা হয়েছে শিগগিরই তা বসানো হবে। ইলামিত্রের বইসহ তার জীবনী সংগ্রহ করে পাঠকদের জন্য রাখা হবে।