কোনো ঈদেই এদের সন্তানরা নতুন পোশাক পায়নি
এক বাড়িতে ৬টি পরিবারে ১৪ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারী, পুরুষ এবং শিশু বসবাস করছে। এরা প্রত্যেকে জন্মের পর থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে না পারায় ভিক্ষা করেই তারা সংসার চালায়।
বগুড়া শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে শিবগঞ্জ উপজেলার শেষ সীমানায় ময়দানহাটা ইউনিয়নের সোবাহানপুর গ্রামে এদের বসবাস।
এই প্রথম তারা ঈদ উপলক্ষে পেলেন মাংস, চাল, ডাল, তেল, সেমাই, চিনি ছাড়াও নতুন পোশাক।
শনিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে তাদের বাড়িতে গিয়ে এসব ঈদ সামগ্রী বিতরণ করেন পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) এর সভানেত্রী রোমানা আশরাফ।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগো বগুড়া ওই পরিবারগুলোর সন্ধান পেয়ে পুলিশ সুপারকে তাদের মানবেতর জীবনযাপনের বিষয়টি অবহিত করে। এরপরই পুলিশ সুপার তাদের বাড়িতে গিয়ে ঈদ সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেন।
জানা গেছে, ওই বাড়িতে বসবাসরত ৬টি পরিবারের প্রত্যেকে ২ কেজি গরুর মাংস, ১০ কেজি চাল, ২ লিটার সয়াবিন তেল, ১ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি লবণ, ২ কেজি আলু, ১ কেজি সেমাই, ১ কেজি চিনি ঈদ সামগ্রী হিসেবে পান।
এছাড়াও এই পরিবারগুলোর নারী, পুরুষ এবং শিশুদের দেয়া হয় নতুন পোশাক।
ঈদ সামগ্রী বিতরণকালে বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁইয়া বিপিএম বার গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে জানান, প্রতিবন্ধী শিশুদের লেখাপড়া এবং চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের দৃষ্টি ফেরানোর ব্যাপারে চক্ষু বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও যারা কাজ করতে না পেরে ভিক্ষা করেন তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারেও চিন্তা ভাবনা করা হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী রোমানা আশরাফ, সহকারী পুলিশ সুপার কুদরৎ-ই-খুদা শুভ, বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), এসএম বদিউজ্জামান, শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান, মোকামতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক সনাতন সরকার। এছাড়াও জাগো বগুড়ার পক্ষে আতিক রহমান, খালিদ হাসান উপস্থিত ছিলেন।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই মানুষগুলো উপহার সামগ্রী চোখে দেখতে না পেলেও তাদের অনুভূতি ছিল অন্যরকম।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরিবারের সদস্য শহিদুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, তার বাবা মৃত আব্দুল জব্বারও ছিলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তারা চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শুধুমাত্র এক ভাইয়ের দৃষ্টি শক্তি রয়েছে। অন্য তিন ভাই, তিন বোনসহ তাদের সন্তানদের মধ্যে ৮ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। বোনদের বিয়ে দেয়া হলে তাদের সন্তানরাও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েছে। বোনসহ তাদের সন্তানরা এখন তাদের বাড়িতে থাকে।
ঈদ সামগ্রী পেয়ে তিনি আরও জানান, মানুষের কাছে হাত পেতে তাদের সংসার চলে। কোনো ঈদেই তাদের সন্তানদের নতুন পোশাক কিনে দিতে পারেননি। তবে এবারের ঈদ তাদের কাছে ব্যতিক্রম। তারা অনেক খুশি।