ঈদের আনন্দ নেই বাঁধে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোতে
তাছের উদ্দিন প্রামানিক। এক সময় চরের জোতদার ছিলেন। যমুনার ভাঙনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। নিজের কিছু না থাকলেও মানুষের কাছে হাত পাততে লজ্জা বোধ করেন তিনি।
কোরবানি দিতে পারেননি অর্থের অভাবে। মানুষের কাছে মাংস চাইতে না পেরে অন্যের বাড়িতে কোরবানির মাংস কেটে দেওয়ার কাজ করেছেন সকাল থেকে। পারিশ্রমিক হিসেবে তাছের উদ্দিন পেয়েছেন ছাগলের মাথার কিছু হাড় ও চিহবা। সেই টুকুই ঝুপড়ি ঘরে এনে বটি দিয়ে ছোট করছেন। এটুকু রান্নার পর স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে দুপুরের খাবার খাবেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলার ঘুঘুমারি উত্তরপাড়া গ্রামের রুলী বেগম। বেলা সাড়ে ১২টায় তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে চুলো জ্বলেনি। তিন বছরের শিশু সন্তান বার বার যাচ্ছে চুলার কাছে, মার কাছে জানতে চাচ্ছে, কখন মাংস রান্না হবে।
মা রুলী বেগম চুলার কাছে গিয়ে রান্নার প্রস্তুতি নিয়ে মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছেন সন্তানকে। রুলী বেগমের স্বামী আব্দুল হান্নান সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন অন্যের বাড়িতে মাংস কাটার কাজে। মাংস নিয়ে বাড়ি ফিরলে তারপর রান্না শুরু করবেন।
একই গ্রামের বৃদ্ধ সাহেব আলী। যমুনার ভাঙনে বাড়িঘড় হারিয়ে এখন নিঃস্ব। হাত-পা গুটিয়ে বাড়িতে বসে আছেন ঈদের দিন। বিভিন্ন প্রশ্ন করলেও কোনো উত্তর নেই তার মুখে।
সারিয়াকান্দি উপজেলায় বন্যাকবলিত এলাকায় সোমবার (১২ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশির ভাগ মানুষের পবিত্র ঈদুল আজহার দিনটি এভাবেই কাটছে।
এই এলাকার বাটুল মিয়া, শাহীন হোসেন, মহারানী, জাফর আলী,জেসমিন বেগম বেগম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে জানান, তাদের আবার ঈদ কিসের? কয়েকদিন আগেও ঘরের চালের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। যা কিছু ছিল ভেসে গেছে বন্যার পানিতে। এখন পানি নেমে গেলও ঘরবাড়ি ঠিক করা যায়নি। সেখানে ঈদের আনন্দ হবে কী করে?
সারিয়াকান্দির বাসিন্দাদের দাবি, সামনে কোনো ভোট নেই, তাই নেতাদেরও খবর নেই। কোনো দলের নেতাই আসেননি তাদের খবর নিতে। সরকারিভাবে যেটুকু ত্রাণ পেয়েছিলেন, তা অনেক আগেই শেষ।
মাঠে কোনো কাজ না থাকায় এলাকার পুরুষ মানুষগুলো বেকার সময় কাটাচ্ছেন। ঈদের দিন সকাল থেকে না খেয়ে রয়েছেন এমন পরিবারের সংখ্যাও কম না। কিন্তু কেউ খবর রাখেন না এদের। এভাবেই খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে বাঁধে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলো।