সীমান্তে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নারী ও শিশু পাচার

  • আজিজুল হক,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, বেনাপোল (যশোর)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

প্রশাসনিক নজরদারি ও বিভিন্ন সংস্থার সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পরও কোনভাবে বন্ধ হচ্ছে না নারী ও শিশু পাচার। ভালো কাজের প্রলোভন দিয়ে বৈধ ও অবৈধ পথে নারী-শিশু পাচার চলছেই।

পাচারের শিকার নারী ও শিশুদের মধ্যে স্বল্পসংখ্যককে উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলেও অধিকাংশই থাকছে পাচারকারীদের বন্দিশালায়।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মাসে ভারতে পাচার হওয়া ১৩৬ জন নারী ও শিশুকে উদ্ধারের পর সরকারিভাবে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ফেরত দিয়েছে ভারতীয় পুলিশ। এছাড়াও সীমান্ত পথে বিভিন্ন সময় বিজিবির হাতে উদ্ধার হয়েছে পাচারের শিকার নারী-পুরুষ।

ভুক্তভোগীরা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করলে তাকে জীবননাশের হুমকির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে তারা ঘৃণ্য এ ব্যবসা সচল রেখেছে।

বিজ্ঞাপন

তবে পুলিশের দাবি সীমান্ত পথে পাচার প্রতিরোধে তারা বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি আন্তরিক হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বৈধ পথে পাচারের কোন সুযোগ নেই।

পাচারবিরোধী সংস্থাগুলোর দাবি মানবপাচারকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলেই এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব। তাদের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে এসেছে পাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্য।

বিভিন্ন এনজিও সংস্থার সূত্রে জানা যায়, গোটা দেশজুড়েই পাচারকারীদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। তাদের মূল টার্গেট দরিদ্র কিশোরী, তরুণী, স্বামী পরিত্যাক্তা নারী এবং শিশু। বিশেষ করে আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাজের প্রলোভন দিয়ে এসব নারী-শিশুকে বৈধ ও অবৈধ পথে ভারতে পাচার করা হচ্ছে। ভারতে পৌঁছানোর পর হাত বদলের সময় ভুক্তভোগীরা বুঝতে পারছে তারা পাচারের শিকার হয়েছে। কিন্তু যখন বুঝতে পারে তখন কিছুই আর করার থাকে না। তাদের পরিবার যাতে খুঁজে না পায় সে জন্য কিছুদিন পর পর বিক্রি করে দেওয়া হয় এক শহর থেকে আরেক শহরে। যতবার বিক্রি হয় ভিকটিমের নাম ততবার বদলে যায়।

সূত্র আরও জানায়, পাচার হওয়ার পর সেখানে ভিকটিমদের অনিশ্চিত ও অভিশপ্ত এক জীবনের যাত্রা শুরু হয়। তবে ভাগ্যের জোরে অনেকে ফিরে আসতে পারেন দেশে। আর যারা ফিরতে পারে না তাদের সাথে পরিবারের সদস্যদেরও মনজ্বালা ও উৎকণ্ঠা নিয়ে অতিবাহিত করতে হয় এক-একটি দিন। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেও থাকতে হয় হুমকির মধ্যে।

তবে ভাগ্যের জোরে যারা ফিরছেন তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। মূলত ভারতে উদ্ধার হওয়া নারী ও শিশুদেরকেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। পাচারবিরোধী সংস্থার এক কর্মকর্তার দাবি মানবপাচারকারীদের চিহ্নিত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় বন্ধ হচ্ছে না জঘন্যতম এ কাজটি।

উল্লেখ্য, গত দেড় বছরে ভারতে পাচারের শিকার ৪১৭ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধারের পর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া সীমান্ত পথে পাচারের সময় বিজিবির হাতে উদ্ধার হয়েছে অনেক নারী,পুরুষ ও শিশু।