বগুড়ায় প্রেমের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ছে ধর্ষণ-অপহরণ
বগুড়ায় প্রেম বা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ, অপহরণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা বেড়েই চলেছে। গত জানুয়ারি থেকে চলতি আগস্ট মাস পর্যন্ত জেলার ১২টি থানায় মোট ১০০টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে ধর্ষণ মামলা ৪৮টি, অপহরণ মামলা ৩৫টি এবং যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ১৭টি মামলা হয়েছে।
জানা গেছে, মামলা তদন্ত করতে গিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তাদের মতে, সমাজের নৈতিক অবক্ষয়, প্রযুক্তির অপব্যবহার ও অভিভাবকদের অসচেতনার কারণে এসব ঘটনা ঘটছে।
আর মামলা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ধর্ষণের দায়ে ৪৮টি মামলার মধ্যে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে ২৭ জনকে, যাদের বয়স ১৮ বছরের কম। আর পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ধর্ষণ করা হয়েছে ১২ জনকে, যাদের বয়স ১৮ বছর। এছাড়া সাতজন গৃহবধূ ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী প্রেমের সম্পর্ক করে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আর বাকি দুইটি মামলার অভিযোগের প্রমাণ পায়নি পুলিশ।
অন্যদিকে, প্রেমের সম্পর্ক গড়ে অপহরণের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৩৫টি। যাদের মধ্যে ১৬ জন স্কুল ছাত্রী, ১৬ জন কলেজ ছাত্রী ও তিনজন গৃহবধূ। একই সময়ে প্রেমের সম্পর্ক করে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে ১৭টি। যাদের মধ্যে সাত বছরের শিশু থেকে এসএসসি পাস করেনি এমন ছয়জন, কলেজ ছাত্রী চারজন ও গৃহবধূ ও স্বামী পরিত্যক্তা সাতজন।
জানা গেছে, এসব মামলায় ভিকটিমদের কাছে সম্পর্ক বা প্রেমটি প্রথমে বিনোদনের বিষয় ছিল। পরবর্তীতে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। পুলিশের কাছে এক স্কুল ছাত্রী অভিযোগ করেছে, বন্ধুর সাথে মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক, পরে স্কুল ফাঁকি দিয়ে পার্কে আড্ডা, এরপর সম্পর্ক আরো গভীর হয়। এক পর্যায়ে সে গর্ভবতী হয়ে পড়ে কিন্তু তার বাবা-মা বিষয়টি জানেন না।
এছাড়াও বগুড়ায় অভিভাবকদের অগোচরে কিশোর গ্যাং কালচার গড়ে উঠেছে। অনেককে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হচ্ছে। ফলে অভিভাবকরা নিরুপায় হয়ে পুলিশের দারস্ত হচ্ছেন। অভিভাবক ও সুশীল সমাজের অনুরোধে পুলিশ গত ২১ আগস্ট শহরের পার্কে অভিযান চালায়। এ সময় স্কুল কলেজ ফাঁকি দিয়ে আড্ডা দেয়ার সময় কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে আটক করা হয়। পরে প্রত্যেকের অভিভাবককে ডেকে তাদের কাছে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনার পর শহরের পার্কগুলোর দৃশ্য পরিবর্তন হয়েছে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বিপিএম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা বিপদে পড়ুন সেটা আমরা কোনোভাবেই চাই না। কোনো অভিভাবকই চাননা তার সন্তানকে অজ্ঞাত চর বা অন্য কোনো জায়গা থেকে বিপদগ্রস্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হোক। তবে এ বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। তাদের সন্তানরা ঠিক সময় স্কুলে যাচ্ছে কিনা বা বাসায় ফিরে আসছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’