সংস্কারের অভাবে হরিশপুর বাস টার্মিনালে চরম দুর্ভোগ
নাটোর থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস চলাচলের একমাত্র টার্মিনাল হরিশপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। অথচ এই টার্মিনালে নূন্যতম সেবা পান না যাত্রী, মোটরযান মালিক ও শ্রমিকরা। উল্টো টার্মিনালের বেহাল দশায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় সবাইকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণের পর ১৬ বছর কেটে গেলেও টার্মিনালটির কোনো সংস্কার করা হয়নি। প্রতি বছর ইজারার মাধ্যমে এই টার্মিনাল থেকে লাখ লাখ টাকা আয় হয়। কিন্তু টার্মিনালের উন্নয়নে বেশ উদাসীন নাটোর পৌরসভা। ফলে যাত্রী ও পরিবহন মালিকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০০২ সালে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নাটোর শহরের শেষ প্রান্তে বড় হরিশপুরে নির্মাণ করা হয় নাটোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। এরপর দীর্ঘ সময় পার হলেও নেয়া হয়নি সংস্কারের উদ্যোগ। খানা-খন্দ, কাদা আর নোংরা পানি জমে ধীরে ধীরে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বাস টার্মিনালটি। সে অবস্থাতেই ২০১৫ সালে শহরের কানাইখালি কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডটি হরিশপুরে স্থানান্তর করা হয়।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা জানান, নাটোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন রুটের এক হাজারের বেশি বাস চলাচল করে। কিন্তু কাদা আর গর্তের কারণে টার্মিনালের ভেতরে বাস প্রবেশ করতে পারে না। তাই সড়কের ওপর যাত্রী ওঠা-নামা করানো হয়। এতে সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।
সম্প্রতি দেখা যায়, দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় বাস টার্মিনালের ছাদে জন্মেছে লতা-গুল্ম, শেকড়-বাকড়। এসব গাছের শেকড় মাটি ছুঁয়েছে আর গাছের ডালপালা যেন আকাশ ছুঁইছুঁই। টার্মিনাল ভবনের দেয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল। যাত্রী ছাউনির বিভিন্ন অংশ ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
টার্মিনালে যাত্রীদের বসার আলাদা কোনো ছাউনি নেই, নেই পাবলিক টয়লেট ও খাবার পানির ব্যবস্থা। ফলে নানা রকম বিড়ম্বনা ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। পাশাপাশি টার্মিনালের ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন হতে পারে না। এতে টার্মিনালের ভেতর হাঁটুপানি জমে যায়।
বাসচালক আলম শিকদার ও আসাদুল ইসলাম জানান, টার্মিনালে প্রবেশের সময় বাসের চাকা গর্তে পড়ে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যায়। ফলে যাত্রীদের সুবিধার জন্য সড়কেই বাস থামাতে হয়।
টিকিট বিক্রেতা কাওসার হোসেন জানান, কাদা-পানি ও গর্তের কারণে যাত্রীরা টার্মিনালে আসতে চান না। ফলে কাউন্টার ছেড়ে বাইরে গিয়ে টিকিট বিক্রি করতে হয়। তাই দ্রুত টার্মিনালটি সংস্কার করা প্রয়োজন।
সাইফুল ইসলাম নামের এক যাত্রী জানান, নাটোর প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও বাস টার্মিনালটি নিম্নমানের। এখানে যাত্রী ছাউনি নেই, টয়লেট নেই, নেই অপেক্ষমাণ যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা। বৃষ্টির সময় ভোগান্তি বহুগুণ বেড়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পরিবহন শ্রমিক নেতা জানান, প্রতিবছর আদায় করা ইজারা থেকে সামান্য খরচ করলেই টার্মিনালের চিত্র পাল্টে যেত। কিন্তু টার্মিনালের উন্নয়নকাজের টাকা এখানে ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যায়।
নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘বাস টার্মিনাল মেরামত ও সংস্কারের জন্য চলতি অর্থবছরে পৌরসভার অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে।’