ভিক্ষুকদের থেকেও অতিরিক্ত কর নেন ইউপি চেয়ারম্যান!
সরকারি নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের কাছ থেকে বসতবাড়ির উপরে অতিরিক্ত কর আদায়ের অভিযোগ উঠেছে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পহরডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোল্যা মোকাররম হোসেন হিরুর বিরুদ্ধে।
চৌকিদারসহ বহিরাগত লোক নিয়োগ করে চাপের মুখে ইউনিয়নের বাসিন্দাদের কাছ থেকে ৩০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত কর আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, কালিয়া উপজেলার পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের চাপাইল গ্রামের বাসিন্দা আফরোজা বেগম (৬০), কচি বেগম (৫৫) ও কমরোন নেছা (৫০)। তারা তিন বোন বাকপ্রতিবন্ধী ও ভিক্ষুক। তাদের মধ্যে কচি বেগমের এক সন্তান থাকলেও স্বামী নেই। প্রতিবন্ধী হওয়ায় বাকি দু’বোনের বিয়েই হয়নি। বসতবাড়ির দু’শতক পৈত্রিক জমি ছাড়া তাদের কিছুই নেই। বড় বোন আফরোজার নামে রয়েছে সরকারি দুস্থ মাতার ভিজিডি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড। ফলে সরকারি সাহায্য ও ভিক্ষাবৃত্তি করে কোনো রকমে চলে তাদের জীবন।
অভিযোগ আছে, তারাও চেয়ারম্যানের করের তালিকা থেকে বাদ যাননি। চেয়ারম্যানের ভাড়াটিয়া লোক ও চৌকিদার কওছার ৩০০ টাকা কর আদায় করতে দু’বার তাদের বাড়িতে যান। কিন্তু করের টাকা দিতে না পারায় ভিজিডি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কেটে নেয়ার হুমকি দেন তারা।
একই গ্রামের ভিক্ষুক মিরাজ খন্দকারের স্ত্রী বিনা বেগম জানান, কয়েকদিন আগে স্থানীয় চৌকিদার কওছারের সঙ্গে অপরিচিত দু’জন লোক এসে ১০০ টাকা কর নিয়ে গেছে।
একই গ্রামের মৃত আয়েন উদ্দিনের ছেলে বশির মিয়া অভিযোগ করে জানান, বাপ-দাদার রেখে যাওয়া দুই শতক বসতভিটা ছাড়া তার আর কিছুই নেই। শ্রমিক হিসেবে কাজ করে তার সংসার চলে। চেয়ারম্যানের লোকেরা মামলার ভয় দেখিয়ে ৩০০ টাকা কর নিয়েছে।
মধুপুর গ্রামের রুবেল শিকদার, লবা শিকদার, বাগুডাঙ্গা গ্রামের আব্দুর রহিমসহ অনেকেই জানান, কোনো প্রচার-প্রচারণা বা আপিলের সুযোগ না দিয়েই প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে ৩-৫ গুণ কর আদায় করা হচ্ছে। আর্থিক অবস্থা দেখে নয়, মুখ দেখে কর নেয়া হচ্ছে। টাকা না দিলে মামলার হুমকিও দেয়া হচ্ছে।
কর আদায়ের কাজে নিয়োজিত হৃদয় নামে একজন জানান, ওই ইউনিয়নে কর আদায়ের জন্য তাদের ১০ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যন মোল্যা মোকারম হোসেন হিরু।
পহরডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আজাহার উদ্দিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা বসতবাড়ি থেকে কর আদায় করতে শতকরা ১৫ টাকা কমিশন দেয়ার শর্তে কিছু লোক নিয়োগ দিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী আর্থিক অবস্থা বুঝে একবাড়ি থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা কর আদায়ের সরকারি বিধান রয়েছে। তবে কার কাছ থেকে কী পরিমাণ কর আদায় করা হচ্ছে সেটা আমি বলতে পারব না।’
অভিযুক্ত পহরডাঙ্গা ইউপির চেয়ারম্যান মোল্যা মোকারম হোসেন হিরু বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘এর আগেও বহিরাগত নিয়োগ করে উপজেলার সালামাবাদ ও ইলিয়াছাবাদসহ কয়েকটি ইউনিয়নে কর আদায় করা হয়েছে। তাই এবারো একইভাবে কর আদায় করা হচ্ছে।’
তবে অতিরিক্ত কর আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছরের বকেয়া থাকলে সে ক্ষেত্রে বেশি টাকা আদায় হতে পারে। ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রের কাছ থেকে করের টাকা আদায় করা হয়েছে কিনা সেটা আমি জানি না। এ রকম কিছু ঘটে থাকলে খোঁজ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘হতদরিদ্র ও ভিক্ষুকদের কাছ থেকে কর আদায়সহ অতিরিক্ত কর আদায়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’