পিঠা বিক্রি করে সচ্ছল সাহিদা বেগম
মাদারীপুর জেলার শিবচরের আর্য দত্তপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাহিদা বেগম। স্বপ্ন ছিল পড়াশুনা করে শিক্ষিকা হবেন। কিন্তু বাল্য বিয়ের কারণে সেটা আর হয়ে ওঠেনি। তবে সংসারের হাল ধরতে নেমে পড়েন শীতের পিঠা বিক্রিতে। এতেই তার ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে, সংসারে এসেছে সচ্ছলতা।
জানা গেছে, মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয় সাহিদা বেগমের। তিন সন্তানের মা হওয়ার পর ছাড়তে হয় স্বামীর সংসার। ফলে ভেঙে যায় তার স্বপ্নও। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় তিন সন্তানকে নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়ি। সেখানে ছেলে মেয়েদের নিয়ে অভাব-অনটনে খাবারই জুটত না। বাধ্য হয়ে শীতের পিঠা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। এখন পিঠা বিক্রি করে বেশ সচ্ছল তিনি। ইতোমধ্যে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এক ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ না পাওয়ায় দেশে ফিরে আসেন। আর অন্য ছেলে স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের শিবচরে সূর্যনগর বাজারে প্রতিদিন পিঠা বিক্রি করতে দেখা যায় সাহিদা বেগমকে। প্রায় ১৩ বছর ধরে একই জায়গায় বসে শীতের পিঠা বিক্রি করে আসছেন তিনি। সারা বছরই ডিম পিঠা, চিতই পিঠা এবং সিদ্ধ ডিম বিক্রি করেন তিনি।
সোমবার (১১ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে পিঠা খাওয়ার সময় সাংবাদিক পরিচয় দিতেই একটু হাসলেন সাহিদা। জিজ্ঞাসা করলেন, 'আমাকে নিয়ে খবর বানাবেন? কোন টিভিতে? কোন চ্যানেলে?' এরপর একে একে বলতে থাকেন জীবনের কথাগুলো।
সাহিদা বেগম বলেন, 'প্রতিদিন ১০-১২ কেজি চালের গুড়া দিয়ে চিতই আর ডিম পিঠা তৈরি করি। সাথে কয়েক রকমের ভর্তা থাকে। এ বাজারে আসা মানুষের কাছে প্রতিদিন সন্ধ্যার নাস্তায় বেশ জনপ্রিয় ডিম পিঠা। সরিষার ভর্তা, শুঁটকি ভর্তা, মরিচের ভর্তা, বাদাম ভর্তা আর ধনেপাতা ভর্তা দেওয়া হয় পিঠার সঙ্গে। ডিম পিঠার দাম রাখা হয় ২০ টাকা, চিতই পিঠা ৫ টাকা। এছাড়াও দেশি হাঁস ও মুরগীর ডিম ২০ টাকা দরে বিক্রি করি। ফলে খরচ বাদে প্রতিদিন ১০০০-১২০০ টাকা আয় হয়। এ আয় দিয়েই ভালোভাবেই চলছে সংসার।'
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন তিনটি চুলায় পিঠা তৈরি করেন সাহিদা বেগম। একের পর এক চিতই আর ডিম পিঠা তৈরি হচ্ছে আর ছাঁচ থেকে নামাতে না নামাতেই চলে যাচ্ছে ক্রেতাদের হাতে। ক্রেতাদের পাশে রাখা বাটি থেকে চিংড়ি, মরিচ, বাদাম ও সরিষা ভর্তা ছোট থালায় তুলে দিচ্ছেন। বেশি পিঠা প্রয়োজন হলে ২/১ দিন আগে অগ্রিম টাকা দিয়ে অর্ডার দিয়ে যান অনেকে।
স্থানীয় ইলিয়াছ আহম্মেদ চৌধুরী কলেজের ছাত্র ফেরদৌস জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যায় এখানে ডিম পিঠা খেতে আসেন তিনি। নানা ধরনের ভর্তা দিয়ে ডিম পিঠা খুবই ভালো লাগে তার।
পিঠা কিনতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা আক্কাস শেখ জানান, ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠার স্বাদ অন্যরকম। বিভিন্ন এলাকা থেকে পিঠা খেতে এখানে আসেন মানুষ।