জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভে গরু-ছাগলের বিচরণ

  • অভিজিৎ ঘোষ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, টাঙ্গাইল
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভ/ ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভ/ ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পর থেকেই সেটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তবে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নিম্নমানের কাজ করায় জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণের বছর না যেতেই রক্ষা গাইড বাঁধ ধসে পড়েছে পুকুরে। স্মৃতিস্তম্ভে লাগানো বাল্বগুলো ও ল্যাম্পপোস্টের মাথাগুলো চুরি হয়ে গেছে। পুরো স্মৃতিস্তম্ভ এলাকায় লতাপাতা গজিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয়রা এখানে ধান শুকিয়ে নেয়। এছাড়া স্মৃতিস্তম্ভে ছাগল-গরু বিচরণ করে। পাশেই বালু পরিবহনের জন্য রাস্তায় ট্রাক চলাচল করছে। এতে স্মৃতিস্তম্ভটি ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।

বিজ্ঞাপন

২০১৩ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন উল্লেখযোগ্য সম্মুখ সমরের স্থান সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এর নির্মাণ কাজ শেষ করে টাঙ্গাইল গণপূর্ত বিভাগ। উপজেলার সিরাজকান্দির (লেংড়াবাজার) যমুনা নদীর কোল ঘেঁষে জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত হয়। এর পরের বছরই স্মৃতিস্তম্ভের রক্ষা গাইড বাঁধ বা পাড় ধসে পুকুরে পড়েছে।

স্মৃতিস্তম্ভের রক্ষা গাইড বাঁধ বা পাড় ধসে পড়েছে/ ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

অন্যদিকে স্মৃতিস্তম্ভটির পাশ দিয়ে বালুরঘাট তৈরি করার ফলে সেখান দিয়ে অবিরত বালু বোঝাই ট্রাক চলাচল করায় স্থাপনাটি ঝুঁকিপূর্ণ ও সৌন্দর্য হারাচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চুরি হয়ে গেছে অনেক কিছু।

গত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে উপজেলা এলজিইডি স্মৃতিস্তম্ভের ভিতরে টাইলস ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ১০ লক্ষাধিক টাকার প্রকল্প নিয়ে কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। উপজেলা পরিষদের এই কাজেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। কাজের কয়েকমাস পরই টাইলসগুলো ভেঙে গেছে।

বিজ্ঞাপন

১৯৭১ সালে ১০ আগস্ট সিরাজকান্দিতে পাকবাহিনীর অস্ত্র, গোলা-বারুদ, জ্বালানি ও রসদ বোঝাই এসটি রাজন ও এসইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এল.সি-৩ জাহাজ থেকে প্রায় ২১ কোটি টাকা মূল্যের অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে। বীরবিক্রম হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে সেগুলো উদ্ধার করার পর জাহাজ দুটিকে ধ্বংস করে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। ধ্বংস হওয়ার কারণে কামালপুর, বাহাদুরাবাদ ঘাট ও নকশী সংঘর্ষের পর জামালপুরসহ উত্তরবঙ্গ রংপুর, দিনাজপুরে পাকবাহিনীর অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ’৭১ সালে ধ্বংস করা জাহাজ বা জাহাজমারা ঘটনাকে স্মরণীয় রাখতে ওই এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভটি। ইতিহাসে জাহাজমারা যুদ্ধ মহান মুক্তিযুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা জামশেদ শেখ জানান, জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণের জন্য ৫ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন টাঙ্গাইলের গণপূর্তের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রশিদ এন্ড ব্রাদার্স নামমাত্র কাজ করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার আব্দুল মজিদ মিয়া বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন উল্লেখযোগ্য সম্মুখ সমরের স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সময় গণপূর্ত বিভাগ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের অবহিত করেনি। তারা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম করেছে। বছর না যেতেই সেটি ধসে পড়েছে। এখন সেটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে।

টাঙ্গাইল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহম্মেদ আব্দুল্লাহ নুর বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পুনরায় সেটি সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।