কুড়িয়ে পাওয়া তিনটি চেক বই দিয়ে ব্ল্যাকমেল!
কুমিল্লায় মো. মোবারক হোসেন নামে একজন আবাসন ব্যবসায়ী ইসলামী ব্যাংকের তিনটি চেক বই হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ওই তিনটি বইয়ে মোট ১১৭টি খালি চেকের পাতা ছিল।
চেক বই হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন মোবারক। পাশাপাশি তিনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
এদিকে, ব্যবসায়ী মোবারক হোসেনের হারিয়ে যাওয়া ওই চেক বই তিনটি কুড়িয়ে পান মো. একরামুল হক নামের এক ব্যক্তি। তিনি জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ফকিরহাট গ্রামের গোলাম হোসেনের ছেলে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, একরামুল বর্তমানে ওই চেকগুলো ব্যবহার করে ব্যবসায়ী মোবারক হোসেনের কাছে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করছেন। আর চাঁদার টাকা না দিলে তিনি চেকগুলো ব্যবহার করে ব্যবসায়ী মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে মামলা করে তাকে হয়রানি করবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন। সর্বশেষ এ ঘটনায় ১১৭টি পাতার নম্বর উল্লেখসহ তিনটি চেক বই উদ্ধারের আবেদন জানিয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন। আবাসন ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন নগরীর দ্বিতীয় মুরাদপুর এলাকার লিয়াকত আলীর ছেলে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন জানান, গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর নগরীর মুরাদপুর এলাকা থেকে চকবাজার যাওয়ার সময় ব্যাগ থেকে আমার নিজ নামীয় ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখার তিনটি চেক বই হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও চেকগুলো না পেয়ে এ ঘটনায় গত ২৯ ডিসেম্বর কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। এরই মধ্যে আমার হারিয়ে যাওয়া চেকগুলো কুড়িয়ে পান একরামুল হক নামের ওই ব্যক্তি। এরপর তিনি ১১৭টি পাতার মধ্য থেকে একটি পাতা দিয়ে এবং আমার স্বাক্ষর জাল করে তার নিজস্ব একটি ব্যাংক একাউন্টে কালেকশনের জন্য চেক জমা দেন। প্রতারক এনামুল ওই চেকে নিজের মনগড়া মত ৪০ লাখ টাকার একটি অ্যামাউন্টও বসিয়ে দেন। তার অ্যাকাউন্ট অন্য ব্যাংকে হওয়ায় আমার স্বাক্ষর না মিললেও চেকটি ডিজঅনার হয়। মূলত এর পরেই আমি জানতে পারি আমার হারিয়ে যাওয়া সেই তিনটি চেক বইসহ মোট ১১৭টি চেকের পাতা তার কাছেই রয়েছে।
মোবারক হোসেনের অভিযোগ, এই খবর পাওয়ার পর আমি তাকে চেকগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু তিনি চেক বইগুলো ফেরত দিতে আমার কাছে প্রথমে ৪০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এরপর কখনো ২০ লাখ, এখনো ১০ লাখ আবার কখনো ৫ লাখ টাকাও চান। আর আমি তার সঙ্গে সমঝোতায় গিয়ে তাকে মোটা অঙ্কের চাঁদা না দিলে তিনি তার চক্রের লোক দিয়ে আমার নামে এভাবে জাল সই দিয়ে চেক ডিজঅনার করিয়ে বিভিন্ন স্থানে মামলা করবেন। সোজা কথা ওই প্রতারক চক্রের মূলহোতা একরামুল হক আমাকে ব্ল্যাকমেল করছেন।
ভুক্তভোগী মোবারক আরও জানান, সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি আমি ওই প্রতারক ও চাঁদাবাজ একরামুল হকের কাছ থেকে ১১৭টি পাতাসহ তিনটি চেক বই উদ্ধারের আবেদন জানিয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছি। আদালত আমার মামলাটি আমলে নিয়ে তাকে হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন। এরই মধ্যে সে আমাকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন। তিনি বলছেন আমি মামলা প্রত্যাহার না করলে সবগুলো চেক ডিজঅনার করে একের পর এক দেশের বিভিন্ন জেলায় মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করবেন। আমি চেক বইগুলো হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি থানায় জিডির পাশাপাশি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকেও লিখিতভাবে জানিয়েছি।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখার ব্যবস্থাপক মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, মোবারক হোসেন নামের ওই গ্রাহক আমাদেরকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন ১১৭টি খালি পাতাসহ তার তিনটি চেক বই হারিয়ে গেছে। তিনি এ ঘটনায় থানায় জিডিও করেছেন।
এদিকে, এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত একরামুল হকের সঙ্গে গত দুই দিন ধরে যোগাযোগের করা হলেও তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেলেই কল কেটে দিচ্ছেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করে কল কেটে দেন। এরপর আরও দুইবার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে রাখছেন, তবে অপর প্রান্ত থেকে কোন কথাই বলেননি।