সরকারি পরীক্ষায় জনপ্রতি খরচ তিন টাকা, আদায় ১০০ টাকা!
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১’ এর লিস্টিং অপারেশন কার্যক্রমে রংপুরের পীরগাছায় লোক নিয়োগের জন্য বেকার প্রার্থীদের নিকট থেকে প্রায় তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যয় করার কথা বলে ১০০ টাকা করে আদায় করা হলেও পরীক্ষায় জনপ্রতি খরচ হয়েছে সর্বোচ্চ তিন টাকা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
উপজেলা পরিসংখ্যান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১’ বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা পরিসংখ্যান কার্যালয় থেকে গত ১০ জানুয়ারি একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের মধ্য থেকে সুপারভাইজার পদে ৪০ জন ও গণনাকারী হিসেবে ২২০ জন নেওয়ার কথা বলা হয়। বাছাই শেষে নির্বাচিত প্রার্থীরা প্রশিক্ষণ ভাতা হিসেবে প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে পাবেন। এছাড়া পারিতোষিক হিসেবে সুপারভাইজার পদে সাড়ে আট হাজার টাকা ও গণনাকারী পদে আট হাজার টাকা প্রদান করা হবে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর উপজেলার বেকার যুবক ও যুব মহিলারা আবেদন শুরু করেন।
মোট ২৬০টি পদের বিপরীতে আবেদন পড়ে তিন হাজার ৬৫৬টি। শর্ত পূরণ না করায় ৮০৫টি আবেদন বাতিল করা হয়। আবেদন বেশি হওয়ায় প্রার্থী যাচাই-বাছাই করতে মৌখিক পরীক্ষার পরিবর্তে লিখিত পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এজন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে প্রবেশপত্র বাবদ দুই হাজার ৮৫১ জন প্রার্থীর নিকট থেকে ১০০ টাকা করে মোট দুই লাখ ৮৫ হাজার ১০০ টাকা আদায় করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গত বৃহস্পতিবার প্রার্থী বাছাই করতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে এক পাতার একটি প্রশ্নের মধ্যেই উত্তর লিখে নেওয়া হয়। পরীক্ষা শেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র সামালোচনা শুরু হয়।
আবেদনকারী প্রার্থীদের অভিযোগ, ‘পরিসংখ্যান অফিস থেকে প্রার্থীর যে সংখ্যা দেওয়া হয়েছে বাস্তবে আবেদনকারী তার চেয়েও বেশি রয়েছে। পরীক্ষায় জনপ্রতি তিন টাকা খরচ হয়নি অথচ ১০০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। পরিসংখ্যান অফিসের কতিপয় কর্মচারী টাকার বিনিময়ে আগেই লোক চূড়ান্ত করে রেখেছেন। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে শুধু লোক দেখানো।’
গণনাকারী হিসেবে আবেদনকারী শরিফুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘পাশের অন্য উপজেলাগুলোতে টাকা ছাড়াই মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে লোক নেওয়া হয়েছে। অথচ পীরগাছায় লিখিত পরীক্ষার নামে টাকা করে আদায় করা হয়।’
সুপারভাইজার পদে আবেদনকারী শাহানত হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘জনশুমারির জন্য বেকারদের পকেট কাটা হয়েছে।’
উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা এস এম শাহনেওয়াজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষার জন্য কোনো বরাদ্দ নেই, তাই অতিরিক্ত টাকা খরচের কোনো সুযোগ নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সিদ্ধান্তক্রমে জনপ্রতি ১০০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমীন প্রধান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নিয়োগ কমিটির সিদ্ধান্তে টাকা নেওয়া হয়েছে। নিয়োগে স্বচ্ছতার জন্য ওই টাকা পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে ব্যয় করা হচ্ছে।’