চা চাষে সম্ভাবনাময় জেলা নীলফামারী

  • মাহমুদ আল হাসান রাফিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নীলফামারী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চা বাগান কিশোরগঞ্জ

চা বাগান কিশোরগঞ্জ

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসিত ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং উপজেলার অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদের পরিত্যক্ত জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চা চাষ শুরু করেন।

২০১৪ সালে প্রাথমিকভাবে এক বিঘা জমিতে ২ হাজার চারা রোপণ করা হলে অল্প দিনেই চায়ের সবুজ পাতা গজাতে শুরু করে। পরে উপজেলা পরিষদের পতিত প্রায় সাড়ে ৩ একর জমিতে চায়ের চারা রোপণ করা হয়। ফলে উপজেলা চত্বরের পতিত জায়গাগুলো পরিণত হয়েছে দুটি পাতা একটি কুঁড়ির ফসল চা বাগানে।

বিজ্ঞাপন

পরীক্ষামূলকভাবে চা চাষে অভাবনীয় সাফল্যের পর বাণিজ্যিকভাবে চা উৎপাদন শুরু হয়েছে। ২০১৫ সালের জুনে উপজেলা প্রশাসনের পরামর্শে এবং বাংলাদেশ চা বোর্ডের কারিগরি সহযোগিতায় সিনহা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি প্রথমে দেড় একর জমিতে চা চাষ শুরু করে। পরবর্তীতে দুই ধাপে তিন মৌজায় মোট ৩৫ একর জমিতে চা চাষ করছে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানটি।

চা বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে মানুষের

সিনহা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি'র বাহাগিলি চা বাগানের ব্যবস্থাপক রিফাত হাসান জানান, ' উপজেলা প্রশাসনের পরামর্শে আমরা চা চাষ শুরু করেছিলাম স্বল্প পরিসরে। পরবর্তীতে লক্ষ্য করা যায় আলু কিংবা ভুট্টা থেকে চা চাষ অধিক লাভজনক। বর্তমানে আমরা ৩৫ একর জমিতে চা চাষ করছি।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরো জানান, 'প্রথম পর্যায়ের ৭ একর জমির বাগানে এ পর্যন্ত আমরা ১ লাখ ২৫ হাজার কেজি চা বিক্রি করেছি। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৬ লাখ টাকা।'

এছাড়াও, উপজেলা ভূমি অফিসের পতিত জমি,  মাগুরা ভূমি অফিসের পতিত জমি ছাড়াও নীলসাগর গ্রুপের অনুভব চা বাগানে বাণিজ্যিকভাবে চা উৎপাদন শুরু হয়েছে। ক্ষুদ্র চা উৎপাদনকারী হিসাবে কিশোরগঞ্জ, ডোমার ও নীলফামারী সদর উপজেলার ১৩ জন কৃষক প্রায় ১৫ একর জমিতে ব্যক্তি উদ্যোগে চা চাষ শুরু করেছেন।

সমতল ভূমির চা বাগান-কিশোরগঞ্জ

সরকারি, বাণিজ্যিক এবং ব্যক্তিগত সব মিলিয়ে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় প্রায়  ৫৩ একর জমিতে এখন চা চাষ হচ্ছে। এসব চা বাগানে প্রতিদিন প্রায় ৬০-৭০ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিক কাজ করছেন। ফলে ওই পরিবারগুলোতে লেগেছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ছোঁয়া।

ময়নাকুড়ি চা বাগানে কর্মরত শ্রমিক আলেয়া খাতুন বলেন, ' অন্যান্য জায়গায় কাজ করার চেয়ে চা-বাগানে কাজের মজুরি বেশী। এ টাকা দিয়ে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি এবং পরিবার নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছি। '

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন খামার সহকারি মো. জায়েদ ঈমাম সিদ্দিকী বার্তা২৪.কমকে জানান, 'চা চাষের জন্য নীলফামারী জেলার মাটি খুবই উপযোগী। পাহাড়ি অঞ্চলে যেখানে ৩ বছরে পাতা উত্তোলন শুরু হয়, সেখানে এ এলাকায় দেড় থেকে দুই বছরে পাতা উত্তোলন হচ্ছে।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বার্তা২৪.কমকে জানান , 'উপজেলা পরিষদে সরকারিভাবে চা নার্সারি তৈরির কাজ চলছে। এ ছাড়াও চলতি বছরের  মধ্যে বাংলাদেশ চা বোর্ড নীলফামারী জেলায় ২৫ হেক্টর জমি চা চাষের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।'