রেকর্ড উৎপাদন সত্ত্বেও চা শ্রমিকদের মজুরি সর্বনিম্ন
দেশে দ্বিতীয়বারের মতো পালিত হচ্ছে জাতীয় চা দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য- ‘চা দিবসের সংকল্প, সমৃদ্ধ চা শিল্প’। এই শিল্পে যাদের সবচেয়ে বড় অবদান, সেই শ্রমিকেরাই থাকছেন অবহেলিত। দেশে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হলেও এ শিল্পে নিয়োজিত ৩ লক্ষাধিক চা শ্রমিক পাচ্ছেন দেশের শ্রম খাতের সর্বনিম্ন মজুরি।
চা বোর্ডের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০২১ সালে দেশে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছে। দেশের ১৬৭টি চা বাগান ও ক্ষুদ্র চা উৎপাদন খাত থেকে সব মিলিয়ে উৎপাদন হয়েছে ৯ কোটি ৬৫ লাখ কেজিরও বেশি চা। যদিও এ সময়ে ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বছরের শেষ দিকে আবাদি অঞ্চলগুলোয় অতিরিক্ত ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে উৎপাদনে কিছুটা কমে যায়। এ কারণে উৎপাদন ১০ কোটি কেজির গণ্ডি পার করতে পারেনি। তবে বছরের দুই মাস আগেই উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যায়।
চা উৎপাদনে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেও উন্নতি হয়নি এ শিল্পে নিয়োজিত ৩ লক্ষাধিক চা শ্রমিকের। তারা বাস করেন মাটির ঘরে। নেই উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা। দৈনিক মাত্র ১২০ টাকার মজুরিতে কোনোমতে চলে তাদের সংসার। দেশের বেশিরভাগ চা বাগান শ্রমিকের জীবনযাপনের চিত্রই একই।
নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে সংসার চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের। অভাব-অনটনের কারণে পরিবারের সদস্যদের শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে পারেন না অনেক চা শ্রমিক।
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালি কার্যকরী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাস পাইনকা জানান, মজুরি বৃদ্ধি, ভূমির অধিকার, চিকিৎসা, শিক্ষা ও আবাসন সুবিধাসহ অবহেলিত চা-শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা হলেও স্থায়ী কোনো সমাধান আজও আসেনি। বারবার দাবি করেও শুধু আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে ভোটের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা চা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দাবি করছি।
তিনি বলেন, আমাদের দিনে মজুরি দেওয়া হয় মাত্র ১২০ টাকা। যা দিয়ে এই সময়ে সংসার চালানো বেশ দুরূহ। চা শ্রমিকরা চুক্তির প্রতিশ্রুত অনেক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত।
চা শ্রমিকের ইতিহাস থেকে জানা যায়, পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে চীন ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোথাও চায়ের প্রচলন ছিল না। ১৮৫৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে সিলেটের মালিনীছড়া বাগানে চা চাষ শুরু করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। সে সময় বৃহত্তর সিলেটে চা বাগান তৈরির জন্য ভারতের আসাম, উড়িশা, বিহার, উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকদের নিয়ে আসা হয়। ‘গাছ হিলেগা, রুপিয়া মিলেগা’ এমন প্রলোভনে শ্রমিকরা বাংলাদেশে এলেও তাদের ভুল ভাঙতে বেশি সময় লাগেনি।
বিশাল পাহাড় পরিষ্কার করে চা বাগান করতে গিয়ে হিংস্র পশুর কবলে পড়ে কত শ্রমিকের জীবন গেছে তার কোনো হিসাব নেই। এছাড়া ব্রিটিশদের অত্যাচার তো ছিলই।