ভোলার তরল গ্যাস আসবে ২১ ডিসেম্বর থেকে
ভোলার উদ্বৃত্ত গ্যাস ২১ ডিসেম্বর থেকে তরল গ্যাস (কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস) আকারে আনতে যাচ্ছে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসি। ওই দিন ভোলা থেকে সিলিন্ডারে করে আনা গ্যাস তিতাস গ্যাস কোম্পানির গ্রাহকের প্রান্তে সরবরাহের উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড।
সিএনজি হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাসের আরেক রূপ যা ওজনে বাতাসের থেকেও হালকা। চাপের দ্বারা সংকুচিত করে, তরল পরিণত করে ট্যাঙ্কে জমা করা যায়।ভোলা থেকে সিলিন্ডারে করে এনে গ্রাহকের প্রান্তে আবার পূর্বের অবস্থায় (১৫ পিএসআই) করে গ্রাহককে দেওয়া হবে। এজন্য নির্ধারিত গ্রাহক প্রান্তেও আরসি (রেগুলেটিং কন্ট্রোল ইউনিট) স্থাপন করা হয়েছে।
সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক প্রদীপ রঞ্জন কুন্ডু বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, প্রথমত দৈনিক ৫ মিলিয়ন করে পরিবহন করবে ইন্ট্রাকো। বৃহস্পতিবার উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে।
কোন পথ দিয়ে যাবে, কোন গ্রাহককে দেওয়া হবে সেসব বিষয়ে কোন তথ্য জানাতে পারেননি প্রদীপ রঞ্জন কুন্ডু।
ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াদ আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা ইতিমধ্যে সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছি। বৃস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিয়েছি। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে আসতে থাকবে। প্রথম গ্যাস দেওয়া হচ্ছে গ্রাফিক্স টেক্সটাইল লিমিটেডকে।
চলতি বছরের ২১ মে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড ও ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসি চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির আওতায় ভোলার উদ্বৃত্ত ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট (দৈনিক) গ্যাস সিএনজি আকারে পরিবহন করে তিতাস গ্যাসের আওতাধীন এলাকায় সরবরাহ করবে কোম্পানিটি। ইন্ট্রাকো প্রতি ঘনমিটার ১৭ টাকা দরে কিনে ৪৭.৬০ টাকা দরে বিক্রি করবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছিলেন, সমকালীন সমস্যাকে মিটিয়ে এগিয়ে যাওয়া এটাই সরকারের বড় লক্ষ্য। যে সব এলাকায় গ্যাসের সমস্যা বেশি সেখানে এই গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এতে শুধু সরবরাহ বাড়বে না, সংকটও দূর হবে।
ওই অনুষ্ঠানে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেছিলেন, আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ৫ মিলিয়ন গ্যাস আনতে সক্ষম হবো, পরবর্তীতে আরও ২০ মিলিয়ন ঘনফুট আসবে। ভোলা এলাকায় ২.০৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে।
আমরা দৈনিক কমবেশি ২২০০-২২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করছি। এর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ৪ হাজারের কাছাকাছি। আমরা দুটি এফএসআরইউ দিয়ে দৈনিক ১ হাজার আমদানি করতে পারি। তারপরও ১ হাজারের মতো ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ঢাকার আশপাশ ও টাঙ্গাইল এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্বল্পচাপ সমস্যায় ভুগছে। যেখানে স্বল্পচাপ বিরাজ করছে সেখানে দেওয়া হবে এই গ্যাস।
সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, ভোলা গ্যাস ফিল্ডে দৈনিক ১২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে। সেখানে সব গ্রাহক মিলে চাহিদা রয়েছে ৯২.৩২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। গ্রাহক না থাকায় ২৭.৬৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উদ্বৃত্ত থাকলেও পাইপলাইন না থাকায় দেশের অন্য অঞ্চলে নেওয়া যাচ্ছে না। বাপেক্সের পত্র মারফত জানা গেছে, ২০২৪-২৫ সালে ভোলার উৎপাদন ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
সরকার ভোলার পাশাপাশি জকিগঞ্জ থেকেও সিএনজি (কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস) আকারে গ্যাস আনতে চায়। এই কাজও ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন পিএলসিকে দেওয়ার বিষয়ে ভাবনা চলছে। ২০২১ সালের জুনে সিলেটের জকিগঞ্জে গ্যাস ফিল্ডটি আবিষ্কার করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। বাংলাদেশের ২৮তম গ্যাস ফিল্ড হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ৪টি স্তরে ৬৮ বিসিএফ (বিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কূপটি থেকে দৈনিক ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে বাপেক্স আশা করছে। নতুন এই ফিল্ডটি থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে বিয়ানীবাজার ও ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গোলাপগঞ্জ।
বাংলাদেশে ২৯টি গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব ফিল্ডে প্রমাণিত মজুদ ধরা হয় ২০.৫৫ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট), সম্ভাব্য ও সম্ভাবনাময় মিলে আরও প্রায় ৮ টিসিএফ মজুদ ধারণা করা হয়। এ যাবত প্রায় ১৯ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ১ টিসিএফ’র মতো গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে সে হিসেবে আর মাত্র ৮ বছরের গ্যাসের মজুদ অবশিষ্ট রয়েছে।