থামছে না বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি

  • মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ফাইল ছবি

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ফাইল ছবি

কোন আশ্বাসেই থামছে না প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের আশ্বাস এবং পুঁজিবাজারের তারল্য সংকট দূর করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ উদ্যোগের পরও আস্থা রাখতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। ফলে শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি করে পুঁজিবাজার ছাড়ছেন প্রবাসী ও বিদেশিরা।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, প্রবাসী ও বিদেশিরা পুরো সেপ্টেম্বর মাসে ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭১ হাজার ৪৮০ টাকার শেয়ার কিনেছেন। এর বিপরীতে ৩১৮ কোটি ১৪ লাখ ২৮ হাজার ৭৮৮ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন। অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাসে ৬০ কোটি ৩৫ লাখ ৫৭ হাজার ৩০৮ টাকার শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। সব মিলে প্রত্যাশার এই মাসে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট লেনদেন হয়েছে ৫৭৫ কোটি ৯৩ লাখ ২৬৮ টাকা।

বিজ্ঞাপন

এর ফলে চলতি বছরের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর টানা ৭ মাস বিদেশিরা শেয়ার কেনার পরিবর্তে শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার ছাড়ছেন। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের অবস্থা কতটা খারাপ হলে এক মাসে শেয়ার কেনাবেচা করেও ডিএসইর একদিনের লেনদেনের সমান হয়নি বিদেশিদের লেনদেন।

ডিএসইর তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রবাসী ও বিদেশিদের শেয়ার কেনাবেচা বাবদ লেনদেন হয়েছিলো ৮১৫ কোটি ১০ লাখ ২৭ হাজার ৪৯৫ টাকা। এর মধ্যে সেই মাসে বিদেশিরা ১৭৫ কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৩৫ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। এরপরের মাস ফেব্রুয়ারিতে ৩২৩ কোটি ১৮ লাখ ৬৭ হাজার ১১০ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন তারা।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু তারপর অর্থাৎ মার্চ মাস থেকে চলা দরপতনের ফলে বিদেশিরা শেয়ার কেনার পরিবর্তে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন। মার্চ মাসে ১২৩ কোটি ৭০ লাখ ৮৮ হাজার, এপ্রিল মাসে ১৫৪ কোটি ১৮ লাখ ৮৩ হাজার, মে মাসে ৬৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৫ হাজার, জুন মাসে ১০ কোটি ৫২ লাখ ১ হাজার, জুলাই মাসে ১৬৪ কোটি ৬৭ লাখ ৮ হাজার, আগস্ট মাসে ১০২ কোটি ৫৩ লাখ ৮১ হাজার টাকার শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার ছেড়েছেন প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করতে সরকার পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পুঁজিবাজারে সুশাসন নিশ্চিত করা হবে। আইনি কাঠামোর মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে আমরা জনগণের আস্থার পুঁজিবাজার প্রতিষ্ঠা করব।

তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি যতটা গতিশীল আমাদের পুঁজিবাজারকে ততটা গতিশীল দেখতে চাই। এখানে বর্তমানে যে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের জন্ম হয়েছে, সেগুলোর একটি হলো—ভালো কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে বাজারে আসছে না। সেগুলো বাজারে আনার চেষ্টা করব। পাশাপাশি আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলো যথাযথ দামে আসে না, বেশি দামে আসে—এগুলো আমরা দেখব।

অর্থমন্ত্রী আরো বলেছিলেন, আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করতে পারি যে, আমরা এখন থেকে সুশাসন নিশ্চিত করব। আগে যেগুলো হয়ে গেছে সেগুলো সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দেখাশোনা করবে। কিন্তু এখন থেকে আর কোনভাবে অপবাদ দিতে পারবে না এই বলে যে, আমরা ন্যায়বিচার করি না অথবা আমরা কারও প্রতি দুর্বল।

যিনি অপরাধ করবেন তিনি যেই হন, যত শক্তিশীলী হন, তাকে আমরা আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে এসে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে জনগণের আস্থার বাজার প্রতিষ্ঠা করব। প্রধানমন্ত্রী অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। আমরা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেব না। দেশের মানুষের শতভাগ আস্থা অর্জন করতে চাই, বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।