চলতি বছর পুঁজিবাজার ছেড়েছেন আড়াই লাখ বিনিয়োগকারী
নতুন সরকারের আমলে ‘পুঁজিবাজার ভালো হবে’ বিনিয়োগকারীদের এমন প্রত্যাশার ছিটে ফোটাও পূরণ হয়নি। বরং আস্থা ও তারল্য সংকটে ২০১০ সালের চেয়ে ভয়াবহ ধস নামে দুই পুঁজিবাজারে।
গত ২৪ জানুয়ারি থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ধসে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি উধাও হয়েছে ৪৭ হাজার ২৫৩ কোটি ৪২ লাখ ৭ হাজার টাকা। ২০১০ সালে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি উধাও হয়েছে ২০-২৫ হাজার কোটি টাকা।
নতুন করে আরও পুঁজি হারানোর ভয়ে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা। এমন পরিস্থিতে লাভ তো দূরের কথা বিনিয়োগের অর্ধেক অর্থ তুলে নিয়ে পুঁজিবাজার ছেড়েছেন অন্তত ২ লাখ ৪১ হাজার দেশি-বিদেশি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও হিসাবধারী)। শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সিডিবিএলের সূত্র মতে, চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ১৩ হাজারটি। সে সময় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ছিল প্রায় ৬ হাজার পয়েন্ট। অর্থাৎ সূচক ছিল ৫ হাজার ৯৫০ পয়েন্ট। আর বিনিয়োগকারীদের পুঁজি অর্থাৎ বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ১৯ হাজার ৯৮৮ কোটি ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
সেখান থেকে ৪৭ হাজার কোটি টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৩৪ কোটি ৫৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকায়। যা শতাংশের হিসেবে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১২ শতাংশ।
আর এখন বিনিয়োগকারীদের বিও সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৬২ হাজার টিতে। অর্থাৎ ২ লাখ ৪১ হাজারটি বিও হিসাবধারী বাজার ছেড়েছেন। তবে প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা আরও বেশি।
নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএসইর শীর্ষ ৫টি ব্রোকারেজ হাউজের মধ্যে একটি ব্রোকারেজ হাউজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বছরের প্রথম দিকে বেশ কিছু নতুন বিও অ্যাকাউন্ট খুলেছেন বিনিয়োগারীরা। আমরাও উৎসাহ দিয়েছি। এখন আর বিনিয়োগকারীদের সাড়া নেই। বাজার ভালো না, আর আমরাও নতুন করে কাউকে আশ্বাস দিচ্ছি না। পুঁজিবাজারে মূলত দুই ধরনের বিনিয়োগকারী রয়েছেন। এর মধ্যে এক ধরনের বিনিয়োগকারীরা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) অংশগ্রহণ করেন। এ ধরনের বিওর সংখ্যা ১৪-১৫ লাখের বেশি।
আর ৮-১০ লাখ বিনিয়োগকারী আছেন, যারা সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করেন।সেকেন্ডারিমার্কেট হলো মূল মার্কেট। কিন্তু এখন সেকেন্ডারি মার্কেটের অবস্থা অতন্ত নাজুক। আমরা হাউজের খরচ চালাতে পারছি না।’
র্যাপিড সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী এনায়েতুল্লাহ খান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, তিনি গত ৩ বছর ধরে ১০টি বিও অ্যাকাউন্ট দিয়ে আইপিওতে আবেদন করছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত লটারিতে জয়ী হননি। বরং ৫১ হাজার টাকা বিনিয়োগ থেকে ব্যাংক অ্যাকউন্ট ও বিও অ্যাকউন্ট চার্জ এবং আইপিও চার্জ বাবদ খরচ হয়েছে ১১ হাজার টাকা। অর্থাৎ ৫১ হাজার টাকায় ১১ হাজার টাকা নেই হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার অ্যাকাউন্ট বাদে, ফ্যামিলির অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে দেব। এরই মধ্যে ৩টি বন্ধ করে দিয়েছি।’
ডিএসইর সাবেক সভাপতি ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, ‘পুঁজিবাজারে দেশি-বিদেশি দুই ধরনের বিনিয়োগকারী থাকেন। বিদেশিরা যত বেশি বিনিয়োগ করবেন, তার মানে দেশে পুঁজিবাজার তত ভালো হবে।
কিন্তু আমাদের পুঁজিবাজারের অবস্থা দেখেন, বিদেশিদের অংশগ্রহণ খুবই কম। তার মানে পুঁজিবাজার ভালো না। আর তাই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বড় বড় ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন।’
নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাজার ভালো হবে এমন প্রত্যাশায় দেশি বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি বিদেশিরাও শেয়ার কেনা বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বাজারে আবারও দরপতনের ধারা অব্যাহত থাকায় তারা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, বাজারে সব ক’টি সূচক নিন্মমুখী, তাই বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে টাকা তুলে নিচ্ছেন। লসে কেন বিনিয়োগ করবেন?