চট্টগ্রামে ১৪৫৯ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ
ভোট এলো, এলো ভোটচট্টগ্রামের ১৬টি আসনে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ২ হাজার ২৩টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৫৯টি কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ অর্থাৎ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ও চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ।
জানা যায়, মহানগরের ছয়টি আসনে ৬৬০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৪৬টি কেন্দ্রই অর্থাৎ ৬৮ শতাংশ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ এবং জেলায় ১০টি আসনের মধ্যে এক হাজার ৩৬৩টি কেন্দ্রের মধ্যে এক হাজার ১৩টি অর্থাৎ ৭৫ শতাংশ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস সূত্র জানিয়েছে, জেলার সাধারণ ভোট কেন্দ্রগুলোতে দুই জন অস্ত্রধারী পুলিশ, গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রগুলোতে তিন জন অস্ত্রধারী পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে ১০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য এবং এক অথবা দুই জন করে প্রতিটি কেন্দ্রে গ্রাম পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
অপরদিকে, নগরীর সাধারণ ভোট কেন্দ্রগুলোতে তিন জন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে চার জন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য এবং প্রতি কেন্দ্রে ১০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার প্রতি ১০টি কেন্দ্রের জন্য সিএমপির একটি মোবাইল টহল টিম মোতায়েন আছে। নগরীর সব ভোট কেন্দ্রের জন্য থাকছে ৪২টি স্ট্রাইকিং ফোর্স। ৬ ও ৭ জানুয়ারি অতিরিক্ত ১৫টি মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করছে। নগরীর ছয় আসনে ৩৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া সাত প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে অবস্থান করবে। উপজেলার আওতাধীন আসনগুলোতে ব্যাটালিয়ন আনসারের ১৩টি টিম স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, নগরীর ছয়টি আসনে ৪৪৬টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে চার জন এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে তিন জন পুলিশ সদস্য এবং ১৫ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। পাশাপাশি মোবাইল টিম, থানা এবং কন্ট্রোল রুমে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। সোয়াট, বোমা ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াডের কে-নাইন ইউনিটকেও স্ট্রাইকিং হিসেবে রাখা হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিন স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। এর একটি তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত, একটি নির্বাচনের দিন এবং অপরটি নির্বাচন পরবর্তী সময়ের জন্য।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, জেলায় সাড়ে ৪ হাজার পুলিশ সদস্য নির্বাচনে দায়িত্বে থাকবেন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পাঁচ স্তরের নিরাপত্তার মধ্যে প্রথমে কেন্দ্রে থাকবে পুলিশ এবং আনসার সদস্যদের নিরাপত্তা বলয়, এরপর থাকবেন মোবাইল টিমের সদস্যরা। আগে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মোবাইল টিমের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করতো এবার আমরা প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়নে দুটি করে মোবাইল টিম দিয়েছি। যাতে কেউ কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাও করতে না পারে। তৃতীয় ধাপে থাকবে স্ট্রাইকিং ফোর্স (পুলিশ এবং আনসার ব্যাটালিয়নের ফোর্স থাকবে), এরপর থাকবে ডিএসবির সদস্যদের সমন্বয়ে গোয়েন্দা নজরদারি। এরপর থাকবে চেক পয়েন্ট, অবৈধ কোনো অস্ত্র কেউ বহন করছে কিনা, কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার চেষ্টা করছে কিনা। সেটা প্রতিটি পয়েন্টে মনিটরিং করা হবে। এছাড়াও থাকবে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট।
চট্টগ্রামের ১৬ আসনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, সুপ্রিম পার্টি, তরিকত ফেডারেশন, ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট, কল্যাণ পার্টিসহ বিভিন্ন দলের এবং স্বতন্ত্রসহ ১২৫ জন প্রার্থী নিবাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
চট্টগ্রামে ১৬ সংসদীয় আসনে ২০২৩ ভোট কেন্দ্র এবং ১৩ হাজার ৭৩২টি ভোট কক্ষে ভোট গ্রহণের জন্য ৪৭ হাজার ৫৪৪ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট ভোট কেন্দ্রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে।
চট্টগ্রামে জেলার ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১০টি আসনের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে আছেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। অপর ছয়টি আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব আছেন বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম।
চট্টগ্রামের ১৬ আসনের নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির ব্যাপারে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমাদের সকল প্রস্তুতি শেষ। প্রার্থীদের সকল ধরনের প্রচার–প্রচারণাও শেষ হয়েছে। রোববার ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
চট্টগ্রামের ১৬ আসনে ব্যালট পেপারসহ সকল নির্বাচনী সামগ্রী চলে গেছে। সার্বিক বিষয়গুলো নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাগণ মনিটরিং করছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।
নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন জানিয়ে ইউনুচ আলী বলেন, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চট্টগ্রামের ১৬ আসনে গত শুক্রবার থেকে ৯৬ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর পাশাপাশি র্যাবের ৩২টি টহল টিমও নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করছে। এদিকে চট্টগ্রামের ১৬ আসনে ৮২ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩২ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে মাঠে কাজ করছেন।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে এবার মোট ভোটার ৬৩ লাখ সাত হাজার ৯৯৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩২ লাখ ৮৩ হাজার ২৫৫ জন। নারী ভোটার ৩০ লাখ ২৪ হাজার ৬৮৪ জন। এর মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৫৬ জন।