নদীরক্ষার দাবিতে মানুষ মিছিল-মিটিং-মানববন্ধন ইত্যাদি কতো কিছুই না করেন। কিন্তু, কখনো শুনেছেন, নদীরক্ষার দাবিতে সাম্পান বাইচের আয়োজন করা হয়েছে? চট্টগ্রাম এমনই এক শহর, যেখানে কর্ণফুলী নদীকে দখল-দূষণের হাত থেকে রক্ষার দাবিতে প্রায় প্রতিবছরই সাম্পান বাইচের আয়োজন করা হয়।
দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র খ্যাত কর্ণফুলী নদীকে দখল ও দূষণের হাত থেকে রক্ষার দাবিতে গ্রামীণ বাংলার চিরাচরিত ঐতিহ্যকে ধারণ করে প্রতি বছরের মতো এবারও সাম্পান বাইচের আয়োজন করেছে ’চট্টগ্রাম ইতিহাস-সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র’। যা দেখতে কর্ণফুলীর দুই তীরে জড়ো হন হাজারো মানুষ।
শুক্রবার (১০ মে) বিকালে কর্ণফুলী নদীর অভয়মিত্র ঘাটে বর্ণিল আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় এই সাম্পান বাইচ। এতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটার তারেক মিস্ত্রী মাঝি, দ্বিতীয় হয়েছেন শিকলবাহার ইসমত উল্লাহ শাহ এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন মতিয়াল্লী শাহ-১।
সাম্পান এক ধরনের নৌকা যা চট্টগ্রাম অঞ্চলে এখনো চালু আছে। কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ঘাটে এই নৌকা নিয়মিত যাত্রী ও মালামাল পারাপার করে। চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে এই বিশেষ নৌযান। গত কয়েক বছর ধরেই কর্ণফুলী বাঁচাতে সাম্পান বাইচসহ নদীকেন্দ্রিক নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সাম্পান প্রতিযোগিতায় অংশ নেন চট্টগ্রাম ইছানগর-বাংলাবাজার সাম্পান মালিক সমিতি, ইছানগর সদরঘাট সাম্পান মালিক সমিতি, চরপাথরঘাটা-ব্রিজঘাট সাম্পান চালক সমিতি, চরপাথরঘাটা-ব্রিজঘাট ব্যবসায়ী মালিক সমিতি, পুরাতন ব্রিজঘাট মাছ ব্যবসায়ী সমিতিসহ একাধিক লাল নীল সবুজ দল।
প্রতিটি সাম্পানে ছিলেন প্রতিযোগী দলের ৮ সদস্য। বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ড. আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
উদ্বোধনী বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, কর্ণফুলী দেশের অর্থনীতির সঞ্চালক। এর বিকল্প নাই। আমরা চাটগাইয়া নওজোয়ান। যেখানে অন্যায় সেখানেই প্রতিবাদ করে তা প্রতিহত করতে হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, দখল-দূষনের কারণে নদী সংকুচিত হচ্ছে। লবনাক্ততা হালদা পর্যন্ত চলে গেছে। যে কারণে নগরবাসী পানি পাবে না। গ্রাম-মফস্বলের টিউবওয়েলে পানি থাকবে না। পানি উঠলেও তা লবনাক্ত হবে। তাছাড়া, দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে কর্ণফুলীর গতিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। আমরা কর্ণফুলী রক্ষায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
’সাম্পান খেলা ও চাটগাঁইয়া সাংস্কৃতিক মেলা ১৪৩১’ আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান হায়দার আলী রনির সভাপতিত্বে সেলিমুল হক ও দিলরুবা খানমের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন লায়ন এমডি এম মহিউদ্দীন চৌধুরী, লায়ন কোহিনূর কামাল, লায়ন মো. হাকিম আলি, কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা জান্নাত, সাম্পান খেলা ও চাটগাঁইয়া সাংস্কৃতিক মেলার আহ্বায়ক চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আলীউর রহমান, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, সোলাইমান তালুকদার, দিদারুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।