ব্যরিস্টার সুমন - সোস্যাল মিডিয়া থেকে পার্লামেন্ট
ভোট এলো, এলো ভোটদেশের রাজনীতি নিয়ে খোঁজ খবর রাখা মধ্যবিত্তদের কতজন ব্যরিস্টার সুমনকে চেনেন? উত্তর এখন হয়তো শতভাগ। কিন্তু রাজনীতির ধু ধু প্রান্তরে আজ থেকে আট বছর আগেও কয়জন এই ব্যরিস্টারকে চিনতেন? উত্তরে হয়তো একভাগও পাওয়া যাবে না।
'শুরু করিতেছি মহান আল্লাহর নামে......' এমন বাক্য দিয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে আসতেন সুমন। ফেসবুকে তার পেজ ব্যরিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। পেজটিতে ফলোয়ার রয়েছে ৫৬ লাখেরও বেশি। ফলে সুমনের পোস্ট করা ভিডিওগুলো লাখের উপর দর্শক পায়।
৭ বছর আগে পেজটিতে পোস্ট করা প্রথম যে ভিডিও দেখা যায় সেটা অবশ্য এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৭ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং ভিডিওটির কোন বিষয়ও উল্লেখ নেই। একটি স্কুলে ছোট পরিসরে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি। তৎকালীন সময়ে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটরের দ্বায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
তৃতীয় ভিডিও থেকে বিষয় উল্লেখ করেন তিনি। সুবক্তা হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেন তিনি৷ তার কথা বলা এবং উপস্থাপনার মৌলিক ধরন খুব সহজেই দর্শকদের আকর্ষণ করে। নিজ এলাকা চুনারুঘাটের মানুষের কাছে পূর্বে থেকে পরিচিত হলেও পুরো বাংলাদেশের মানুষের কাছে তিনি পরিচিতি পান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
বিভিন্ন এলাকায়, এমনকি চলার পথে যে অসঙ্গতি আর অনিয়ম চোখে পড়ে সেগুলো নিয়েই ফেসবুকে লাইভ করতেন তিনি। এর থেকে বাদ পড়েনি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, ফোন কোম্পানি, সামাজিক সংগঠন, প্রশাসন।
তবে ধীরে ধীরে বাংলাদেশে ফুটবলের জন্য হ্যমিলনের বাঁশিওয়ালা হয়ে উঠেন তিনি। ব্যরিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন, নিজেও সেই দলে খেলেন। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সুমন তার দল নিয়ে ফুটবল খেলে বেড়ান। এছাড়াও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বর্তমান দ্বায়িত্বপ্রাপ্তদের কড়া সমালোচনা করেও আলোচনায় রয়েছেন তিনি। তার ফুটবল খেলার ভিডিওগুলোর দর্শক শুধু ফেসবুকেই কয়েক লাখ হয়। এছাড়াও তার আয়োজিত ম্যাচগুলোতে দর্শক যেন উপচে পড়ে এখনো৷
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে যুবলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক থেকে বহিস্কার করা হয় তাকে। শরীয়তপুরে পুলিশের এক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দলীয় স্লোগান দিলে, তার সমালোচনা করেন সুমন। এর কিছুদিন পরেই তাকে বহিস্কার করা হয়।
তবে সরকারি তহবিলের দিকে তাকিয়ে না থেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে এলাকার জন্য তার শ্রম বৃথা যায়নি। স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সমালোচনা তিনি যেমন করেছেন, তেমনি নিজের এবং মানুষের থেকে অনুদান নিয়ে এলাকায় ২১ টি সেতু তৈরী করেন তিনি। স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থান তৈরীর নানা উদ্যোগও প্রশংসিত হয়।
এই সবকিছুরই ফল পেয়েছে ব্যরিস্টার সুমন। ৭ জানুয়ারি ২০২৪ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে পরাজিত করে চমক দেখিয়েছেন ব্যরিস্টার সুমন। তিনি হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনে প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীকে হারান।
তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মাহবুব আলী পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৫৪৩ ভোট। নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এই বিপুল জয়কে স্থানীয়রা ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই বিবেচনা করছেন।
সুমনের এ জয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করছেন নেটিজেনরা। ফুটবল নিয়ে তার আগ্রহ এবং কর্মসূচীর কারণে অনেকেই তাকে ফুটবল ফেডারেশনের দ্বায়িত্বে দেখতে চান বলে জানিয়েছেন। আবার অনেকেই উন্মুখ হয়ে আছেন সংসদে তার বক্তৃতা শোনার জন্য।