আজরার প্যারিস ফ্যাশন উইকের স্বপ্নপূরণ
![আজরা মাহমুদ / ছবি : ফেসবুক](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2024/Mar/13/1710323961582.jpg)
আজরা মাহমুদ / ছবি : ফেসবুক
গত ২৩ বছর ধরে বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন আজরা মাহমুদ। দেশের সবচেয়ে বড় ফ্যাশন ইভেন্টগুলো তার পরিচালনাতেই হয়ে থাকে। এই মডেল ও কোরিওগ্রাফারের স্বপ্ন ছিল একদিন বিশ্বের ফ্যাশনের পিঠস্থান’খ্যাত প্যারিস ফ্যাশন উইকে যাবেন।
অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হলো এই তারকার। গত ৩ মার্চ প্যারিসের ঐতিহাসিক লিসে কার্নো স্কুলে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বনন্দিত ফ্যাশন ব্র্যান্ড মুগলারের ফল/উইন্টার ২০২৪-২৫ কালেকশন প্রদর্শনী। এতে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় মডেল ও কোরিওগ্রাফার আজরা মাহমুদ।
অনন্য সেই অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে আজরা বলেন, ‘আমার ফ্যাশন জগতে আসার মূল কারণটাই ছিল এফটিভি (ফ্যাশন টিভি)। ঐ চ্যানেলে সব সময় ফ্যাশন উইকই দেখাতো। আমার আজকে এতদূর আসা, সুন্দর করে কাজ করা, একটা আলাদা দর্শন তৈরি হওয়া, স্বপ্ন তৈরির বড় জায়গা জুড়ে আছে এই এফটিভি ও প্যারিস ফ্যাশন উইক। আমি ২০০৪ সালে কোরিওগ্রাফি শুরু করেছি। আর আজ ২০ বছর পর এসে সেই জায়গায় যাওয়া, দর্শক হয়ে ফ্যাশন উইক দেখার এই অনুভূতিটা একেবারেই অন্যরকম। আমরা আমাদের কাজের মানের কথা বললে বলতেই পারি যে, আন্তর্জাতিক দিক থেকে কোন অংশে আমরা কম নই বা পিছিয়ে নেই। ঐখানে বসে আমার মনে হচ্ছিল, আজ আমি কাজ ছেড়ে দিলে আমার খারাপ লাগবে না। কারণ আমি মনে করি আমরা এটা অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। আমাদের মডেলিংকেও একটা একটা মানে উন্নীত করতে পেরেছি। টেকনিক্যাল জায়গা থেকে আমরা অবশ্যই পিছিয়ে আছি, তবে সেটাও খুব একটা নয়।’
![](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&quality=75&path=uploads/news/2024/Mar/13/1710321314621.jpg)
তিনি আরও বলেন, ‘শেষ হওয়ার পর অনেকক্ষণ চুপ করে বসেছিলাম। সেখানে আমার উপস্থিতিকেই আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এখনো মনে হলে আমার চোখ ভিজে ওঠে। এই আসরে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে পারাটা আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রেরণাদায়ক অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। এরপর থেকে যখনই কোন কাজ করব চেষ্টা করব নতুনতর ভাবনাকে সম্পৃক্ত করতে। আর ঐ অভিজ্ঞতা থেকে নিরন্তর প্রাণিত হতে। মুগলারের শো উপভোগ করার পর থেকে এক অদ্ভূত প্রশান্তি আমাকে ঘিরে রেখেছে। কারণ এতটা বছর ধরে কাজ করে আমি আমার দেশকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে পেরেছি। কোন সন্দেহ নেই এটাই আমার পরিতৃপ্তি।’
যে স্থানে এই শোটি হয়েছে সেটি সম্পর্কে আজরা বলেন, ‘এই ফ্যাশন শোয়ের আয়োজন করা হয় প্যারিসের ঐতিহাসিক লিসে কার্নো স্কুলে। এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৯ সালে। এখানে ফ্রান্সের অনেক গুণী ব্যক্তিত্ব পড়াশোনা করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক, ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্যাসকাল লামি, যাজক ও ধর্মতত্ত্ববিদ আলেক্সজান্ডার শিম্যান, নব্বই দশকের বিখ্যাত ইলেক্ট্রনিক মিউজিক গ্রুপ ডাফট পাঙ্কের দুই সদস্য থমাস ব্যাংলাটার ও গাই ম্যানুয়েল ডি হমেম-ক্রিস্টো। এই স্কুলের স্থাপত্য নকশা কেবল পুরনো ও দৃষ্টিনন্দনই নয়, অতীত ইতিহাসেরও সাক্ষী। এই রকম একটি স্থাপনায় দাঁড়িয়ে প্যারিস ফ্যাশন উইকের মত বড় ইভেন্টে মুগলারের শো দেখার অভিজ্ঞতাটা একেবারেই অন্যরকম।’
এরপর তিনি ব্র্যান্ড মুগলার সম্পর্কে বলেন, ‘মুগলারের ফ্যাশন শো ছিল দারুণ থিয়েট্রিক্যাল ও ড্রামাটিক ছিল। সাধারণত আমরা যেমন রানওয়েতে মডেলদের আসা যাওয়া দেখি- সেরকম নয়। এতে মোট ৪১ জন মডেল রানওয়েতে হাঁটেন। মূল ফ্যাশন শো শুরু হলে প্রথমে ৪ জন মডেল হেঁটে যান। এরপর প্রথম পর্দা উন্মোচিত হয়। পর্দার পিছন থেকে আরও মডেল বেরিয়ে আসেন। আর তারা একের পর এক পর্দা ফেলতে থাকেন। এভাবে লিসে কার্নো মূল হলটাকে প্রকাশ করে। এই হলের তিন ভাগের দুই ভাগই ছিল মূল রানওয়ে সেট। একভাগ ছিল দর্শকদের বসার জায়গা। আর মডেলরা মুগলারের সিগনেচার বোল্ড ও ফেমিনিন স্টাইলটাকে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। কালেকশনে কালোর সিংহভাগ ব্যবহার ছিল উল্লেখযোগ্য। সঙ্গে লাল ও কিছু প্রিন্টের ব্যবহার হয়েছে। সাধারণত মুগলারের সংগ্রহে প্রিন্ট খুব একটা দেখা যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘শোয়ের একদম শেষে ৪১ জন মডেল একসঙ্গে রানওয়েতে ফিরে আসেন। তখনই ব্যাকস্টেজকে উন্মোচিত করা। দর্শকদের দৃষ্টিগোচর হয় সম্পূর্ণ ব্যাকস্টেজ। দেখা যায় নেপথ্যের মানুষগুলোকে। যারা সবসময়ে থাকেন পেছনে। কখনোই দেখা যায় না তাদের। অথচ এখানে তাদের এবং তাদের কর্মপ্রক্রিয়াকে তুলে ধরা হয়। এটা কোন সন্দেহ নেই অভিনব। পুরো ফ্যাশন শোটি এত সুন্দর করে শুরু ও শেষ হয় যে, সামনের সারিতে থাকা ভিআইপি ও সেলিব্রেটিদের দিকে কারো সেভাবে চোখই পড়েনি। একে বলা যেতে পারে 'দ্য শো টুকওভার' মোমেন্ট।’
এই ফ্যাশন শোতে অনেক সেলিব্রিটি ছিলেন। মিয়া খলিফা, ব্রুকলিন বেকহাম, নিকোলা পেল্টজ, জুলিয়া ফক্স, কোরিয়ান সুপারস্টার জুংহুয়া, বারবারা পেলভিন প্রমুখ।
আন্তর্জাতিক ইভেন্ট থেকে কি শিখলেন জানতে চাইলে আজরা বলেন, ‘এই আয়োজনে কেবল অংশগ্রহণের জন্য যাওয়া নয় বরং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখা ও বোঝার জন্যও। কারণ তারা কিভাবে কাজ করেন, কিভাবে এই শোগুলো হয়, আমাদের দেশের আয়োজন থেকে কতটা আলাদা এই শো-এটা জানাই ছিল বোধকরি আমার আমার মূল উদ্দেশ্য।’
এই শোতে অংশ নিয়েছিলেন আজরা ও তার স্বামী দেওয়ান মুহাম্মাদ সাজিদ আফজাল। তারা দুজনই কালো রঙের পোশাক পরেছিলেন। নিজের সাজ পোশাক সম্পর্কে আজরা বলেন, ‘এই শো দেখেছি থিয়েরি মুগলারের ভিআইপি অ্যান্ড মিডিয়া রিলেশনস লিড আইদা মেহনাজের অতিথি হিসেবে। এটা আমাদের জন্য এক বিরাট পাওয়া বলতেই হবে। আমরা সবাই জানি মুগলারের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর ক্যাসি ক্যাডওয়ালেডার সলিড কালার নিয়ে বেশি নিরীক্ষা করেন। বিশেষ করে কালো রং নিয়ে বেশি কাজ করেন। সেই কারণে আমি ও আমার হাজব্যান্ড সাজিদ কালো পোশাক পরে গিয়েছিলাম। হাউজ অব আহমেদ আমাকে নতুন ডিজাইনের শাড়ি দেয় যার ব্লাউজ চামড়া দিয়ে তৈরি, হাতায় জারদৌজি করা। এছাড়া পুরো শাড়ির জমিনে পুঁতির কাজ করা। আমার হাজব্যান্ড পরেছিলেন কালো সিল্ক ও ভেলভেটের টাক্সিডো। এটা জুরহেমের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর মেহরুজ মুনিরের ডিজাইন করা। টাক্সিডোর ভেলভেটের পুরোটা জুড়ে পুঁতির কাজ করা।’