শুরু হয়ে গেছে ঈদের প্রেক্ষাগৃহ নিয়ে লড়াই!
দেশে এখন নিয়মিত সিনেমা হলের সংখ্যা বড়জোড় ৬০ থেকে ৭০টি। দুই ঈদে দর্শকের চাপ থাকায় বিশেষ ব্যবস্থায় আরও কিছু হল চালু হয়। সব মিলিয়ে ঈদের সময়ে হলের সংখ্যা দাঁড়ায় ১শ ২০ থেকে ১শ ৩০টির মতো।
বিগত কয়েক বছর ধরে দেখা গেছে, দেশের যে কয়েকটি চলচ্চিত্র ভালো ব্যবসা করে, তার ৯০ ভাগই ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা। বাকি সময়ে যে ছবিগুলো মুক্তি পায়, সেগুলো প্রত্যাশানুযায়ী ব্যবসা করতে ব্যর্থ হয়।
তাই গত কয়েক বছর ধরেই লক্ষ করা যাচ্ছে, যে সব ছবির বাজেট একটু বেশি কিংবা জনপ্রিয় তারকারা রয়েছেন সেসব ছবিতে, তার প্রযোজক ও পরিচালকরা ঈদেই ছবিটি মুক্তি দিতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেন।
মোটকথা প্রতিবারই ঈদের সময় প্রেক্ষাগৃহ পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে এক ধরনের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এই যুদ্ধে সব সময় এগিয়ে থাকেন শাকিব খান। তার সিনেমার প্রতিই দর্শকদের সবচেয় আগ্রহ বেশি থাকে বলে তিনিই থাকেন বেশিরভাগ প্রেক্ষাগৃহজুড়ে। বাকি হলগুলো নিয়ে শুরু হয় একাধিক প্রযোজকের কাড়াকাড়ি।
এবার ঈদুল ফিতরেও যে একই চিত্র দেখা যাবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার ঈদে মুক্তি প্রতীক্ষিত ছবির তালিকা যেমন লম্বা, তেমনি রয়েছে নানা ধারার নানা স্বাদের সিনেমা।
তাতে সুপারস্টার শাকিব খানের তথাকথিত বাণিজ্যিক ঘরানান সিনেমা ‘রাজকুমার’ যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে একেবারেই আর্ট ঘরানার সিনেমা গীয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘কাজলরেখা’। একইসঙ্গে রয়েছে তরুণ নির্মাতা মিশুক মনির বানিজ্যিক ও আর্ট ঘরানার মিশেলে তৈরি ছবি ‘দেয়ালের দেশ’। আবার জাজ মাল্টিমিডিয়ার ভৌতিক ঘরানার ‘মোনা: জিন ২’ ছবিটিও রয়েছে মুক্তির মিছিলে।
এছাড়াও ঈদে মুক্তি পেতে এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, যে ছবিগুলো পেতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে ‘ওমর’, ‘সোনার চর’, ‘ডেড বডি’, ‘চক্কর’, ‘আহারে জীবন’, ‘মেঘনাকন্যা’ ও ‘পটু’।
তবে চলচ্চিত্রবোদ্ধারা বলেছেন, ঈদের সিনেমা নিয়ে আগাম ঘোষণা এলেও শেষ মুহূর্তে সরে যায় অনেক সিনেমা। অনেকেই ধারণা করছেন, হয়ত গত ঈদের মতো এবারও পাঁচ/ছয়টি সিনেমা মুক্তি পেতে পারে।
একটা সময় এক ঈদে শাকিবের পাঁচটি ছবিও মুক্তি পেয়েছে। তবে এ ধারার ব্যত্যয় হয়েছে। এবার এক সিনেমা দিয়েই ঈদে শাকিব তার উপস্থিতি জানান দেবেন। ‘রাজকুমার’ নামের সেই সিনেমাটির শুটিং শেষ করেছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভার্সেটাইল মিডিয়া। এতে শাকিবের সহশিল্পী মার্কিন নায়িকা কোর্টনি কফি। গত ১১ মার্চ শাকিব খান তার ফেসবুকে লেখেন, ‘রাজকুমার কামিং দিস ঈদুল ফিতর’! পরিচালক হিমেল আশরাফ বলেন, ‘অনেক বড় পরিসরে রাজকুমারের শুটিং হয়েছে, যা কিছুদিন আগেও বাংলা সিনেমার জন্য স্বপ্ন ছিল। শুধু নিউইয়র্কেই টানা ১৮ দিন শুটিং হয়েছে, যেখানে প্রতিদিন অনেক মার্কিন পেশাদার কলাকুশলী কাজ করেছেন, সঙ্গে বাংলাদেশের টিম তো ছিলই। সিনেমার গান, লোকেশন, অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ এমন কিছু চমক আছে, যা প্রেক্ষাগৃহে এলেই চমকে দেবে সবাইকে।
‘মনপুরা’ মুক্তির পর ২০০৯ সাল থেকে ‘কাজল রেখা’ নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন বরেণ্য নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম। দীর্ঘ ১২ বছরের গবেষণা শেষে ২০২২ সালে ছবির শুটিং করেন। সিনেমাটি এবারের ঈদে তিনি মুক্তি দিতে চান। প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো ঘটনার প্রেক্ষাপটে মৈমনসিংহ গীতিকার একমাত্র রূপকথা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ‘কাজল রেখা’। এতে অভিনয় করেছেন শরিফুল রাজ, মন্দিরা চক্রবর্তী, ইরেশ যাকের, সাদিয়া আয়মান, আবুল কামাল আজাদ, মিথিলা, খায়রুল বাশার, শাহানা সুমি, সুজয়।
গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘দুই বছর ধরে ৫০ দিন নেত্রকোনার দুর্গাপুর, খুলনা সুন্দরবন, কক্সবাজার, সিলেটের হাওর ও রাজধানীর মিরপুরে ‘কাজল রেখা’র শুটিং সম্পন্ন হয়। আমরা অনেক পরিশ্রম করে সিনেমটি নির্মাণ করেছি। আশা করছি, দর্শকদের ভালো লাগবে।
‘পটু’ সিনেমার ফার্স্ট লুক প্রকাশ করে ঈদে এর মুক্তির ঘোষণা দিয়েছে পরিবেশক ও প্রযোজনা সংস্থা জাজ মাল্টিমিডিয়া। সম্প্রতি, প্রতিষ্ঠানটির ভেরিফাইড ফেসবুকে এমনই সুখবর মিলেছে। সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন আহম্মেদ হুমায়ুন। এ ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ইভান সাইর। সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন– আফরা সাইয়ারা, শোয়েব মনির, দিলরুবা হোসেন দোয়েল, বাচ্চু দেওয়ান, গালিব সরদার প্রমুখ।
গত ২৫ জানুয়ারি ‘আহারে জীবন’-এর ফার্স্টলুক পোস্টার প্রকাশ করে ঈদে এর মুক্তির কথা জানিয়েছেন, নির্মাতা ছটকু আহমেদ। করোনাকালীন একটি গল্প ঘিরে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। এখানে সামাজিক জীবনের টানাপোড়েনের একটি ব্যতিক্রমী গল্প আছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমায় অভিনয় করেছেন– ফেরদৌস, পূর্ণিমা, সুচরিতা, মিশা সওদাগর, কাজী হায়াৎ, জয় চৌধুরী, মৌমিতা মৌসহ আরও অনেকে।
রাজ-বুবলী অভিনীত ‘দেয়ালের দেশ’ সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন মিশুক মনি। বাংলাদেশ পরিচালক ও প্রদর্শক সমিতিতে ঈদুল ফিতরে মুক্তির জন্য নিবন্ধিত হয়েছে এটি। অনুদানের সিনেমাটি পরিচালনার পাশাপাশি ছবির কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন নির্মাতা নিজেই। নতুন জুটির রসায়ন দেখার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন দর্শকরা।
এছাড়া সম্প্রতি সেন্সর বোর্ড থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে জাজ মাল্টিমিডিয়ার আরেক সিনেমা ‘মোনা: জ্বীন-২’। এটিও ঈদে মুক্তি পাবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয়েছে মোনার চিত্রনাট্য। সিনেমাটির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সুপ্রভাত। অভিনয়ে আরও আছেন– তারিক আনাম খান, আহমেদ রুবেল, দীপা খন্দকার, আরিয়ানা, সাজ্জাদ হোসেন, সামিনা বাসার, শেহজাদ ওমর, রেবেকা, মাহমুদুল হাসান মিঠু, শামীম প্রমুখ।
অন্যদিকে, ঈদের ছবি হিসেবে মুক্তির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত জাহিদ হোসেনের সিনেমা ‘সোনার চর’। এতে অভিনয় করেছেন ওমর সানী, মৌসুমী, জায়েদ খান, শহীদুজ্জামান সেলিম, স্নিগ্ধা, শবনম পারভীনসহ অনেকে। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ফিরে আসার সময়ের গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে সিনেমাটি।
বিজ্ঞাপন ও নাট্যনির্মাতা হিসেবে বহু আগে সুনাম অর্জন করেছেন শরাফ আহমেদ জীবন। এবার তিনি নির্মাণ করেছেন সিনেমা ‘চক্কর’। অনুদানের এ সিনেমায় অভিনয় করবেন মোশাররফ করিম। তার সঙ্গে আছেন মৌসুমী নাগ ও রিকিতা নন্দিনী শিমু।
ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি প্রতিক্ষীত ছবিগুলোর খাতায় নাম লেখিয়েছে ফুয়াদ চৌধুরী পরিচালিত ‘মেঘনা কন্যা’। গত ৮ মার্চ নারী দিবসে অনলাইনে অবমুক্ত হয়েছে নারী পাচারকে কেন্দ্র করে নির্মিত ছবিটির টিজার। এক মিনিট সাত সেকেন্ডের টিজারে ঘুরে ফিরে উঠে এসেছে দুজন আলাদা শ্রেণি ও জায়গার নারীর গল্পের আবহ। নিষিদ্ধপল্লীর অন্ধকার জগতের মানুষদের পাশাপাশি 'মেঘনা কন্যা'র টিজারে আছে শহুরে নারীর অসহায়ত্বের গল্পের ইঙ্গিতও। এতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন কাজী নওশাবা আহমেদ, ফজলুর রহমান বাবু, শতাব্দী ওয়াদুদ, সেমন্তি দাস সৌমি, সাজ্জাদ হোসেইনসহ অনেকে। সংগীতায়োজনে রয়েছেন চিরকুটখ্যাত সুমী। চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য ও সংলাপ করেছেন ফাহমিদুর রহমান এবং আহমেদ খান হীরক।
ঈদে মুক্তির তালিকায় থাকা মোহাম্মদ ইকবাল পরিচালিত সিনেমা ‘ডেড বডি’তে অভিনয় করেছেন শ্যামল মাওলা, জিয়াউল রোশান, মিষ্টি জান্নাতসহ অনেকে।
গত বছরের শেষ দিনে ‘ওমর’ সিনেমার পোস্টার মুক্তি পায়। সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন শরিফুল রাজ। সিনেমায় আরও রয়েছেন– ফজলুর রহমান বাবু, শহীদুজ্জামান সেলিম, নাসির উদ্দিন খানের মতো বাঘা বাঘা অভিনেতা। এ সিনেমাটি নিয়ে বেশ আশাবাদী পরিচালক মুহম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। তিনি বলেন, সব কাজ শেষ। এর মুক্তির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। আমরা সামাজিক মাধ্যমেই প্রচারণার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। আশা করছি, সিনেমাটি দর্শকের ঈদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেবে।